কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কে বাহারছড়ার শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় সপ্তম দফায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে পুলিশের উপপরিদর্শক কামাল হোসেনের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এ দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত। গত ২৭ অক্টোবর ষষ্ঠ দফায় ৩ দিনের সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ দিনে আজ থেকে সপ্তম দফায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আলোচিত এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে।
আজ সোমবার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে হাজিরা দিয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন, টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম সামসুদ্দোজা, কক্সবাজার ডিবি পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক মানস বড়ুয়া, সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট আয়ুব আলী ও মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার এম জামিরুল হক।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর জিয়া উদ্দীন আহমদ জানান, আদালতের কাঠগড়ায় মামলার ১৫ আসামির সবাই উপস্থিত রয়েছেন।
গত ২৩ আগস্ট মামলার বাদী মেজর (অব.) সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও সাক্ষীদের জেরা পর্ব। এ পর্যন্ত মোট ৫৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন আদালতে। তাদের মধ্যে ৯ জন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। মামলার অভিযোগপত্রে তালিকাভুক্ত মোট সাক্ষী ৮৩ জন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ৪ মাস তদন্ত করে ১৫ জনকে এ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর। এ বছরের ২৭ জুন ফৌজদারি কার্যবিধি মতে মামলায় অভিযুক্ত সব আসামির উপস্থিতিতে বাদী ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। ওই দিন সব আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবী করেন বিচারকের কাছে।
গত বছরের ৩১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহার আগের দিন রাত সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কে বাহারছড়ার শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের গুলিতে মারা যান মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন ১ আগস্ট টেকনাফ থানায় ২টি মামলা করে।
৫ আগস্ট কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে লিয়াকত ও প্রদীপসহ ৯ জন আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। আদালত শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের এজাহারটি সরাসরি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করার জন্য টেকনাফ থানার ওসিকে আদেশ দেন। এরপর এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসাবে টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করা হয় এবং ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক ওসি প্রদীপকে। লিয়াকতসহ অন্যান্য আসামিদেরও ওইদিন পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। মামলার বাদীর এজাহারে আসামি হিসেবে ৯ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন আদালতে।
১৫ আসামির মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল সাগর দেব ছাড়া অপর ১৩ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। তারা হচ্ছেন—পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর রহিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মোহাম্মদ শাহাজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, টেকনাফের মারিশবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আয়াজ ও নেজাম উদ্দীন।