বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে। হরতালে নাশকতা ঠেকাতে সকাল থেকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট ও মহাসড়কে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ফলে, সড়কে হরতালের তেমন কোন প্রভাব নেই বললে চলে। প্রায় প্রতিটি সড়কেই ভারি যানবাহন ছাড়া সবধরনের যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নিত্যদিনের মতোই স্বাভাবিক চলছে আদালতের কার্যক্রম।
শনিবার বিএনপির সমাবেশ থেকে ঘোষণা আসে রবিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল-সন্ধ্যা দেশব্যাপী হরতাল। সারাদেশের মতো শনিবার সন্ধ্যায় হরতালের বিপক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন এবং হরতালের পক্ষে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠন মিছিল করে। অনেক সড়কে টায়ার জালিয়ে বিক্ষোভও দেখায় বিএনপি সমর্থকরা। বিএনপির হরতালকে সমর্থনদেয় জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো।
পূর্ব ঘোষণা মতে, হরতালে রবিবার মাঠে নামার কথা থাকলেও কক্সবাজার শহরসহ অন্যান্য উপজেলা সমূহের কোথাও পিকেটিংয়ে নেই বিএনপি-জামায়তের নেতা-কর্মীরা। তবে কিছু কিছু জায়গায় ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপির সমর্থকরা। এছাড়া কক্সবাজার পৌর শহরের ঝাউতলা হোটেল রেনেসাঁসের সামনের প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে লুকিয়ে যায় হরতাল সমর্থকরা।
সড়কে বিএনপি-জামায়াতের কেউ না থাকলেও কঠোর অবস্থানে ছিলো আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন মোডে মোডে তাদের অবস্থান চোখে পড়ার মতো।
সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়া ক্ষুদ্র যানের চালকরা জানান, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া-ঈদগাঁও-রামু-উখিয়া-টেকনাফ ও কক্সবাজার সদরের কোথাও কোন পিকেটিং বা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা দলগুলোর নেতাকর্মীদের অবস্থান চোখে পড়েনি। যাত্রী নিয়ে চলাচলের সময় কোথাও কোন বাধার মুখে পড়তে হয়নি। তবে, শনিবার রাজধানীতে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় দেখেছি- তাই আমাদের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করছে।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, হরতালের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সহিংসতা ঠেকাতে নেতা-কর্মীরা মাঠে রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনোর চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কাইছার হামিদ বলেন, কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১২টি পয়েন্টে পুলিশের টিম মাঠে রয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়কসহ জেলা জুড়ে পয়েন্টে পয়েন্টে পুলিশ টিম সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মাঠে রয়েছে র্যাবের কয়েকটি টিমও। কোথাও কেউ সহিংস ঘটনা ঘটাতে চাইলে প্রতিহত করা হবে।
চকরিয়া চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার ইনচার্জ খোকন কান্তি রুদ্র জানান, হরতালে সরকারি সম্পত্তি, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক চলাচল বজায় রাখতে কক্সবাজার মহাসড়কের বানিয়ারছড়া স্টেশনে হাইওয়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থান রয়েছে। তার নেতৃত্বে পুলিশের পৃথক দুইটি টিম মাঠে দায়িত্বপালন করছে। হরতালের নামে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাড় দেয়া হবে না।
টেকনাফ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, টেকনাফে পুলিশ সতর্ক অবস্থান রয়েছে। পুলিশের পৃথক চারটি টিম সবধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করছে।
পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সর্তক অবস্হানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে যান চলাচল খুব কম রয়েছে। দূর পাল্লার বাস ছাড়েনি।
বেলা ১২ টার দিকে পেকুয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ওমর হায়দার বলেন, বিএনপি- জামায়াতের হরতালে পেকুয়া কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থায় রয়েছে। পুলিশের পৃথক ৬টি টিম মাঠে রয়েছে।
রামু উপজেলায় বিএনপি ঘোষিত হরতালের রামুতে কোন চিহ্নই দেখা যায়নি। সকাল থেকে সতর্ক অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
তবে, সকাল ৭ টার দিকে হরতাল সমর্থনে কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মিনিট দশেকের জন্য অবস্থান নিয়ে ফটোস্যুট করে আবার মাঠ ছাড়েন।
রামু থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ান বলেন, রামুতে শান্তিপূর্ণ হরতাল চলছে। নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। এই পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
উখিয়া উপজেলা বিএনপি পক্ষ থেকে একটি ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল করা হয়,তবে পুলিশ আসার সাথে সাথে মিছিলকারীরা চলে যান।
উখিয়া উপজেলায় মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছ। সরকারি-বেসরকারি অফিস গুলো খোলা, স্বাভাবিক রয়েছে যান চলাচল। তবে দূরপাল্লার বাস চলতে দেখা যায়নি। মাঠে টহলে রয়েছে পুলিশের একাধিক টিম। রোববার সকালে কোটবাজার, মরিচ্যা, উখিয়া সদর স্টেশন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
উখিয়া থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাত্রী নীরব ও ইমরান বলেন, অফিসিয়াল কাজে যাচ্ছি। হরতালের কোন প্রভাব দেখতি পাচ্ছি না। সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক রয়েছে।
শফিউল ইসলাম নামের এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, হরতালের কথা শুনছি, কোনো সমস্যা হয়নি। যানজটে পড়িনি, পিকেটিংও দেখিনি।
ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে কোটবাজার এসে দোকান খুলেছি। আজ হরতাল শুনেছি কিন্তু পথে এর কোনো প্রভাব দেখিনি।
উখিয়া উপজেলার মূল স্টেশনসমূহের পরিস্থিতি সরেজমিনে ঘুরে দেখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মো. রাসেল বলেন, উখিয়ায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এখন পর্যন্ত হরতাল সমর্থনে কোনো মিছিল মিটিং বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, উখিয়ায় পুলিশ সতর্ক অবস্থান রয়েছে। পুলিশের একাধিক পৃথক টিম সবধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করছে। এই পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, মহেশখালীতে হরতাল বিরোধী মিছিল করেছে আওয়ামীলীগ।