সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :
কক্সবাজার – জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) কুতুপালংয়ে ১৬ নং ক্যাম্পে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ২,২০০ জন রোহিঙ্গাকে আজ গরম খাবার সরবরাহ করছে। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে কমপক্ষে ৫০০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
গতরাতের অগ্নিকাণ্ডের পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে WFP ও তার অংশীদার বাংলাদেশী এনজিও রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) ৩২৮টি পরিবারকে (আনুমানিক ১,৬০০ মানুষকে) উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট সরবরাহ করেছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে এই পরিবারগুলোর কেউ তাদের ঘর হারিয়েছে আবার কারও রান্নার সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব পরিবারের রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই, তাদেরকে আজ থেকে WFP-এর পক্ষ থেকে দিনে দুইবার করে রান্না করা গরম খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। যতোদিন পর্যন্ত এই পরিবারগুলোর ঘর পুনর্নির্মাণ করা না হচ্ছে ও তাদের জন্য রান্না করার গ্যাসসহ রান্নার অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যবস্থা না হচ্ছে, ততোদিন পর্যন্ত এই গরম খাবার সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। আর, তারপর থেকে পরিবারগুলোকে WFP-এর নিয়মিত খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করা হবে।
কক্সবাজারে WFP-এর সিনিয়র ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর ও শীর্ষ কর্মকর্তা শিলা গ্রুডেম বলেন, “১৬ নং ক্যাম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা দেখে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।” তিনি আরও বলেন, “সৌভাগ্যক্রমে, বিভিন্ন জাতীয় সংস্থা, জাতিসংঘ সংস্থা, খুচরা বিক্রেতা ও স্থানীয় রেস্টুরেন্টের সাথে অংশীদারিত্বের কল্যাণে, সর্বস্ব হারানো এই রোহিঙ্গাকে তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে, আর এজন্য আমরা প্রত্যেকেই কাজ করে যাচ্ছি।”
২০২১ সালের মার্চ মাসে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের সময়ের মতোই, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা, বিশেষত, যারা আগুনে তাদের নথিপত্র হারিয়েছে, তাদেরকে সহায়তা দানের জন্য, খাদ্য নয়— এমন সামগ্রী, যেমন: রান্নার গ্যাস সরবরাহ করার জন্য সমন্বয় কার্যক্রমে মানবিক সহায়তা দানকারী অংশীদাররা যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এবং সেজন্য যেন তারা WFP-এর ডিজিটাল বেনিফিশিয়ারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে, WFP সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করে চলেছে। এ ছাড়াও, WFP ও ইন্টার এজেন্সি সাইট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট (এসএমইপি)-এর স্বেচ্ছাসেবকরা ধ্বংসাবশেস পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
কক্সবাজারে WFP-এর নিয়মিত খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের অধীনে রোহিঙ্গাদেরকে WFP-এর পক্ষ থেকে একটি করে ইলেকট্রনিক ভাউচার (“ই-ভাউচার”) দেওয়া হয়, যাতে প্রত্যেক রোহিঙ্গার জন্য মাসিক ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে ১,০২৭ টাকা করে দেওয়া থাকে। এই ভাউচারটি ব্যবহার করে তারা ক্যাম্পজুড়ে ২২টি ই-ভাউচার আউটলেট থেকে সরাসরি তাদের পছন্দমতো খাবার কিনতে পারে। আর এই ই-ভাউচার আউটলেটগুলো পরিচালনা করে বাংলাদেশী খুচরা বিক্রেতাগণ। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে WFP-এর কোনো স্থাপনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। আর তাই, অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা রান্না করার সরঞ্জাম পাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই আবারও আউটলেটগুলো থেকে খাবার কিনতে পারবে।
কক্সবাজারে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির, যাতে প্রায় ৯ লক্ষ রোহিঙ্গা বসবাস করে। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি রোহিঙ্গাদের ঘনবসতিপূর্ণ ঘরগুলোতে আগুন লাগা অন্যতম এক বিপদজনক ব্যাপার, যা রোহিঙ্গাদের ঝুঁকির মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে এক অগ্নিকাণ্ডের ফলে ১০ হাজার ঘর পুড়ে গিয়েছিল আর বাস্তুচ্যুত হয়েছিল কমপক্ষে ৪৫ হাজার মানুষ। এ ছাড়াও, ২০২১ সালের জুলাই মাসে তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা। সেইসময় বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছিল।
জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সংস্থা। আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবিক সংস্থা যা জরুরি অবস্থায় মানুষের জীবন রক্ষা করছে এবং খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে সংঘাত, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারকৃত মানুষের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনছে।