২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা হালনাগাদ ভোটার তালিকায় কক্সবাজার জেলায় নতুন করে স্থান পেয়েছে দুই লাখ ৩৯৯৫ জন নতুন ভোটার। হালনাগাদ কার্যক্রমের আগে পুরো জেলার ৯ উপজেলায় ভোটারসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ১৭৪০৬ জন (নারী–পুরুষ)।
সর্বশেষ হালনাগাদের পর জেলায় ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৩৯৫ জন। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, আবেদন করাসহ ছবি ও ফিঙারপ্রিন্ট নেওয়া হলেও অনেকেই তালিকায় স্থান পায়নি। এই সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন উপজেলায় ফরম সংকটের কারণে শুরুর দিকে অনেকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারার অভিযোগ থাকলেও পর্যায়ক্রমে সবাই তালিকায় স্থান পাবে। যারা বাদ পড়ে গেছেন তাদেরকেও যাচাই–বাছাই করে তালিকায় যোগ করা হবে। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া।
কর্মকর্তারা বলেছেন, হালনাগাদ কার্যক্রমের সুযোগে যাতে কোনো রোহিঙ্গা কোনোভাবেই তালিকায় স্থান না পায় সেজন্য বেশ সতর্ক এবং কঠোর নজরদারি ছিল হালনাগাদ কার্যক্রমের সময়। বেশ কড়াকড়ির কারণে তালিকায় কোনো রোহিঙ্গা এবার ভোটার হতে পারেনি।
জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, তালিকায় স্থান পাওয়া নতুন নিবন্ধিত ২ লাখ ৩৯৯৫ জনের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৯০ জন এবং বিপরীত লিঙ্গের (নারী) ৯০ হাজার ২৬৮ জন। নিবন্ধিত ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ, ছবি উত্তোলন, ডাটা আপলোড শেষ হয় গত ডিসেম্বরে। এবারের হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন ৭৭৫ জন তথ্য সংগ্রহকারী ও ১৭২ জন সুপারভাইজার।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন জানান, কক্সবাজারে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। যা চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৬ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের সকল তথ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে ১৮ বছর পূর্ণ হলে। তাদের ডাটাবেজ নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত থাকবে। ১৮ বছর পূর্ণ হলেই তাদের নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় নাম চলে আসবে।
উপজেলা ভিত্তিক হালনাগাদের তালিকায় স্থান পাওয়া নতুন ভোটারের সংখ্যা হল চকরিয়ায় ৫১ হাজার ৯৩৯ জন, পেকুয়ায় ২২ হাজার ১৩২ জন, কুতুবদিয়ায় ১১ হাজার ৯৫৬ জন, মহেশখালীতে ২৮ হাজার ৯০০ জন, কক্সবাজার সদরে (ঈদগাঁওসহ) ৩৮ হাজার ৬৫১ জন, রামুতে ১৬ হাজার ৭১৮ জন, উখিয়ায় ১৭ হাজার ১৭৮ জন, টেকনাফে ১৬ হাজার ৪৮৫ জন। এ নিয়ে জেলায় সর্বমোট হালনাগাদ তালিকায় স্থান পেয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৯৯৫ জন নতুন ভোটার। হালনাগাদের পর জেলার ৯ উপজেলা, ৪ পৌরসভা, ৭১ ইউনিয়নে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ১৭ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৬৫ জন। হালনাগাদের পর উপজেলাভিত্তিক বর্তমান ভোটার পরিসংখ্যান হল চকরিয়ায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮৯ জন। পেকুয়ায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৫ জন। কুতুবদিয়ায় ১ লাখ ৫৮৫ জন। মহেশখালীতে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৬ জন। কক্সবাজার সদরে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭১৭ জন। রামুতে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৮ জন। উখিয়ায় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫৪ জন এবং টেকনাফে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৯১ জন।
হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে দাবি করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, হালনাগাদ কার্যক্রম শেষের পর ইতোমধ্যে অনলাইনে আপলোড হয়েছে নতুন ভোটারদের সার্বিক তথ্য। আমাদের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়েছে। যারা বাদ পড়েছেন তারা অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। এজন্য চিন্তার কোনো কারণ নেই। পুনরায় কমিশন তারিখ ঘোষণা করলে হালনাগাদের কাজ শুরু হবে। এবারের হালনাগাদ কার্যক্রম খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল জানিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, আমরা পুরো টিম সতর্কতার সঙ্গে কাজ করেছি যাতে তালিকায় কোনো রোহিঙ্গা স্থান না পায়।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যে কঠোর নির্দেশনা ছিল, তা শতভাগ মেনেই হালনাগাদ কার্যক্রম চলেছে। এতে একজন রোহিঙ্গাও তালিকায় স্থান পায়নি।