কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ১০ মরদেহসহ ভেসে আসা ট্রলারের প্রকৃত ঘটনা নিয়ে এখনো বিভ্রান্তি কাটেনি।
গত ২৩ এপ্রিল ভেসে আসা ওই ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের পরদিন ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অপর ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে। আজ রোববার ওই ৩ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তারা হলেন-কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী ইউনিয়নের শাহ আলম (৫৪), মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মো. ইকবাল (২৭) ও কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মেজবাহ উদ্দিন (৫০)।
পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া অপরজনের মরদেহ আদালতের অনুমতি পেয়ে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর পুলিশ বলছে, ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও, ট্রলারটিতে মোট ১৩ জন ছিলেন।
পুলিশ পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘ট্রলারের চার মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। মরদেহ দাবি করা স্বজনদের একাধিক পক্ষের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুরু থেকে এক পক্ষ দাবি করে আসছিল ট্রলারটিতে ১৩ জন ছিলেন। একই কথা বলেছিলেন মামলার বাদি। ডিএনএ পরীক্ষার পর এটাই সত্য বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।’
‘মরদেহগুলোর জোর দাবি করে আসা স্বজনদের সঙ্গে ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন না মেলায় এ ঘটনায় এখনো ৪ জন নিখোঁজ হিসেবে ধরা হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, নিখোঁজ দাবি করা ৪ জন হলেন মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম (১৮), সাইফুল্লাহ (২৩) ও পারভেজ মোশাররফ (১৪) এবং চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম (৩৪)।
রোববার ৩ মরদেহ হস্তান্তরের সময় সাইফুল্লাহর মরদেহ দাবি করা তার বাবা সাহাব মিয়া কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পুলিশ আমার ও আমার স্ত্রীর ডিএনএ নমুনা নিয়েছিল। এখন আমাদের সঙ্গে মরদেহের ডিএনএ মেলেনি বলছে। যেটি দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেটি আমার ছেলে সাইফুল্লাহর।’
এ ৪ জনের বিভ্রান্তি দূর করতে মামলাটি আরও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানান পরিদর্শক দুর্জয়। আদালতের আদেশ অনুযায়ী সাইফুল্লাহর স্বজনদের মরদেহ হস্তান্তর করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
দুর্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘পরিচয় শনাক্ত না হওয়া মরদেহটি কার এমন প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি ৪ জন নিয়ে আছে বিভ্রান্তি। ওই ৪ জন এখন কোথায়? জীবিত না মৃত? এমন প্রশ্নের উত্তর মামলার তদন্তের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে। এ জন্য অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।’
শাহ আলমের মরদেহ নিতে আসা তার ছেলে মামুনুর রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বাবা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে চকরিয়া গিয়েছিলেন। পরে জানতে পারি তিনি ট্রলারে করে সাগরে গেছেন। কেন সাগরে গেছেন, কার সঙ্গে গেছেন আমরা জানি না। এরপর থেকে বাবা নিখোঁজ।’
মেজবাহ উদ্দিনের ছেলে আবু সাইদ মো. জিসানও বলেন, তার বাবা সাগরে গিয়ে নিখোঁজ ছিলেন।
ইতোমধ্যে এ ঘটনায় পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
১০ মরদেহসহ ট্রলার ভেসে আসার ঘটনায় ২৫ এপ্রিল নামবিহীন ওই ট্রলারের মালিক মৃত সামশুল আলম প্রকাশ ওরফে সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৬০ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।