সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং অস্থিতিশীলতা প্রতিরোধে জেলা পুলিশের ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযানে গত দুইদিনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাসহ ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য মতে, মঙ্গলবার গভীর রাতে রামু উপজেলার মিঠাছড়ি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় এক আ.লীগ নেতা উলঙ্গ পালিয়েছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রোববার রাত থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া থানায় পৃথক অভিযান চালিয়ে এই ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার সদর থানার অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি আয়েশা সিরাজ, শ্রমিক লীগ নেতা নূরুল আলম (৪৫), পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নূর মোহাম্মদ (৫৬) এবং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকতার কামাল সোহেল (২৭)।
ওসি মো. ইলিয়াস খান জানান, আয়েশা সিরাজ গণ-আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। কক্সবাজার শহরের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন স্টেডিয়াম এলাকায় আত্মগোপনে থাকার তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উখিয়া থানার অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কক্সবাজার জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, রাজাপালং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন এবং রাজাপালং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি রেজাউল করিম।
মহেশখালী থানার অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন, বড়মহেশখালী ইউনিয়নের গোরস্তান পাড়ার সিরাজ মিয়া (৫০) ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ডা. নূরুল আমিনের ছেলে মো. ছাদেক উল্লাহ (৫৫)।
পেকুয়া থানার অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন, রাজাখালী ইউনিয়ন সৈনিক লীগের সভাপতি মো. ফোরকান, যিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন।
কুতুবদিয়া থানার অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তুহিন, যিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং সম্প্রতি বাড়িতে ফেরার খবরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চকরিয়া থানার অভিযানে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজারের রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ রাতভর অভিযান চালায় পুরো উপজেলাজুড়ে। এসময় রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের ডানহাত খ্যাত আবু বক্কর ছিদ্দিক ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা প্রত্যয় বড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
ওসি ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, পুরো উপজেলাজুড়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট চলছে। রামু থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের চারটি পৃথক টিম মাঠে কাজ করছে।
পুলিশ কর্মকর্তা ইমন আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিক আত্মগোপন থেকে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নের পাশাপাশি জুলাই -আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে কক্সবাজার শহরের লালদিঘি পাড়ে ছাত্র- জনতার উপর ব্যাপক গুলিবর্ষণে ভূমিকা রাখেন। এবং ভারি অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।
তিনি বলেন, তাকে কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। এবং অস্ত্রবাজির ঘটনায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরো উপজেলাজুড়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানে জেলা পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে। অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটছে জেলা পুলিশের।
তিনি বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ তদারকির জন্য স্ব স্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেলদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সিনিয়র কর্মকর্তারা অভিযান তদারক করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’