শিরোনাম ::
মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

কক্সবাজারের শিহাব বিমান বাহিনীর গুলিতে মারা যাননি: আইএসপিআর

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষের মধ্যে যে তরুণের মৃত্যু হয়েছে, তিনি বিমান বাহিনীর গুলিতে মারা যাননি বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) ভাষ্য।

সোমবার বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলেছে, “একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে উক্ত যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়।”

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিমান ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতি পাড়া এলাকায় স্থানীয়রা বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় ঢিল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিও ছোড়া হয়।

আইএসপিআর তখন এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলে, “বিমান বাহিনীর ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতি পাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।”

ওই বার্তায় হতাহতের কথা না বললেও পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে।

নিহত শিহাব কবির নাহিদ (৩০) পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি সমিতিপাড়ার নাছির উদ্দিনের ছেলে। তার মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

শিহাবের মা কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমেনা খাতুন হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, “বিমান বাহিনী আমার ছেলের মাথায় গুলি করেছে।”

স্থানীয়রাও বলেছেন, শিহাবের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। তবে পুলিশ বা হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।

শিহাব বিমানবাহিনীর গুলিতে নিহত হননি দাবি করে আইএসপিআর বলেছে, “গুলির খোসার ছবি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, উক্ত খোসাটি ফাঁকা গুলির (Blank Cartridge) যা প্রাণঘাতি নয় এবং শুধুমাত্র শব্দ তৈরি করে। যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।”

ঘটনার বিবরণে যা বলছে আইএসপিআর

সমিতিপাড়ায় কী ঘটেছে, সে বিষয়ে বিমানবাহিনীর ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার (২৪-২-২০২৫) তারিখে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মটর সাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিকেরও বেশি স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাধা দেয়।

পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপর ইট পাটকেল ছোড়ে। এসময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।

উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমান বাহিনীর Rules of Engagement অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের উপর কোন প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি।

‘শেখ হাসিনা বিমান ঘাঁটি নয়’

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “উক্ত ঘটনা প্রকাশে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার এর নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে- যা সত্য নয়।”

২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারি প্রজ্ঞাপনে ওই ঘাঁটির নাম পরিবর্তন করে ‘বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার’ রাখা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে বলে আইএসপিআরের ভাষ্য।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সর্বদা অঙ্গীকারাবদ্ধ।”


আরো খবর: