বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

কক্সবাজারসহ সীমান্তের ইয়াবা যায় লঞ্চে, পাচারের সুবিধার্তে সীমান্ত এলাকা থেকে করেছেন বিয়েও!

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩

বরগুনা ও আমতলী রুটে চলা লঞ্চগুলোতে মাদক পরিবহনের জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক কারবারিরা। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের একাধিক অভিযানে ঢাকা-বরগুনা ও ঢাকা-আমতলী রুটে চলা লঞ্চ থেকে ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে আসা যাত্রীবেশী কারবারীদের কাছ থেকে একাধিকবার গাঁজার চালান উদ্ধার করেছে। একইভাবে বরগুনা থেকে ঢাকা সদরঘাট পৌঁছানো লঞ্চে অভিযান চালিয়ে ঢাকাগামী যাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাও উদ্ধার হয়েছে।

গত ৬ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া লঞ্চঘাট এলাকা থেকে ১২ কেজি গাঁজাসহ মো. রফিক বিহারী (৩০), তার স্ত্রী হাজেরা বেগম (২৬) এবং মো. জালাল মিয়া (২৪) নামের তিন মাদক কারবারিকে আটক করে র‌্যাব। ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি বরগুনার ঢাকা থেকে আমতলীতে আসা সুন্দরবন-৭ লঞ্চে অভিযান চালিয়ে হাবিবুর রহমান ও রিয়াজ গাজী নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর বরগুনার আমতলী উপজেলার লঞ্চঘাটে নোঙ্গর করা অবস্থায় এমভি ইয়াদ লঞ্চ থেকে বীথি আক্তার (২২) লামিয়া আক্তার (২০) নামের কে দুই নারীকে মাদকসহ আটক করে পুলিশ। এ ছাড়াও বরগুনা-ঢাকা ও বরগুনা-আমতলী রুটে চলা লঞ্চে বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করেছে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সড়ক পথে অভিযান জোরদার থাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে সম্প্রতি নৌপথ বেছে নিয়েছে মাদক কারবারি চক্র।

জানা গেছে, বরগুনায় লঞ্চ থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে বেশীরভাগই গাঁজার চালান। আর বরগুনা থেকে ঢাকা সদরঘাটে বরগুনার লঞ্চ থেকে উদ্ধার হওয়া মাদক ছিল ইয়াবার চালান। অর্থাৎ, বরগুনা থেকে ইয়াবার চালান হয় লঞ্চযোগে আর একই রুটে বরগুনা আসে গাঁজার চালান।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের সূত্রে মতে, গাঁজা ও ইয়াবা এই দুই ধরনের মাদক কারবারি আলাদা। যারা গাঁজার কারবার করেন তাদের অনেকেই ইয়াবা ব্যবসায় যুক্ত নয়। আবার ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও গাঁজা ব্যবসায় কম জড়িত। বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পরীরখাল, বুড়িরচর ইউনিয়নের লবনগোলা, কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের যুগিয়া ও গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা, লাকুরতলা ও গৌরিচন্না এলাকায় চিহ্নিত কিছু গাঁজা ব্যবসায়ী এবং জেলার প্রতিটি উপজেলার পুলিশের তালিকাভুক্ত চিহ্নিত গাঁজা কারবারি টেকনাফ, কক্সবাজার চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি ও বান্দবান এলাকা থেকে মাদক কারবারিরা গাঁজার চালান নিয়ে বিভিন্ন রুটে ঢাকা ও চাঁদপুরে হয়ে লঞ্চযোগে বরগুনায় গাঁজার চালান নিয়ে আসে। এই মাদক কারবারিদের অনেকের বাড়ি বরগুনায়। ব্যবসার সুবিধার্থে এরা চট্টগ্রাম কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় মাদক কারবারিদের আত্মীয়-স্বজন বিয়েও করেছেন অনেকে। সেখানে থেকে মাদকের চালান নিয়ে নারীদের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এলাকায় নিয়ে আসেন। লঞ্চে তল্লাশি কম হওয়ায় মাদক কারবারিরা লঞ্চকেই মাদক চালানের জন্য নিরাপদ মনে করেন। এ ছাড়াও নারীদের সন্দেহ ও তল্লাশি কম হওয়ায় ক্যরিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা করে মাদক কারবারিরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইয়াবা মায়ানমারে তৈরি। এগুলো কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সমুদ্রপথে মৎস্য ট্রলারে করে মাদকের বড় বড় চালান আসে। চারদিকে নদী থাকায় যেকোনো পয়েন্টে ট্রলার থামিয়ে চোরাকারবারিরা মাদকের চালান খালাস করে। এর মধ্যে স্থানীয় বেশ কিছু ইয়াবাকারবারি জড়িত। যারা মূলত ইয়াবার চালান গ্রহণ করে ক্যারিয়ারের হাতে পৌঁছে দিতে কাজ করেন। এরপর ইয়াবার এসব চালান লঞ্চযোগে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছে। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

২০১৯ সালের ২ এপ্রিল বরগুনা বরগুনা থেকে ঢাকা সদরঘাট পৌঁছলে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে আট লাখ পিস ইয়াবার একটি চালান উদ্ধার করে। সে সময় গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন র‌্যাবকে জানিয়েছিলেন, সমুদ্রপথে আসা ইয়াবার চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে লঞ্চযোগে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। এর আগেও তারা লঞ্চযোগে একাধিকবার ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় এসেছেন বলেও র‌্যবের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছিলেন।

র‌্যাব-৮ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো.নাজমুল ইসলাম বলেন, নৌপথে কম নজরদারি থাকায় সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। আসলে লঞ্চে গণতল্লাশের সুযোগ কম। তবে আমরা নৌপথের গণপরিবহনে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও মাঝে মাঝে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করব।

বরগুনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, মাদকের ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি এবং প্রতিদিনই মাদক উদ্ধার ও কারবারিদের আটকে কাজ করছে জেলা পুলিশ। বরগুনা থেকে নৌপথে ইয়াবার ও গাঁজার চালান আটকের বিষয়ে আমরা তৎপরতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।


আরো খবর: