নিজস্ব প্রতিবেদক :-
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আবারো মানব পাচারকারী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে চোখকে ফাকি দিয়ে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। উখিয়া-টেকনাফে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাসকে কাজে লাগিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মানব পাচারকারী চক্র । ফলে স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারাও মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ছে নিয়মিত। শুধু পুরুষরাই নয়, চক্রের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নারী ও শিশুরা। বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে এই চক্রের কিছু সদস্য আটক হলেও চক্রের গডফাদাররা সবসময় আড়ালে থেকে যায়। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মিয়ানমার ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশেও সক্রিয় রয়েছে। এই জঘন্য অপরাধ কর্মকান্ডে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ও বাংলাদেশী স্থানীয় কিছু অপরাধী চক্রের সদস্যরাও।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ভোরে মানবাধিকার পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে ৮ এপিবিএন আটক করে। এ সময় তদের হাতে মিয়ানমারে জিম্মি থাকা ১২ দিন পর কেফায়েত উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গাকে কৌশলে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনা হয়েছে। সে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৯ এর বাসিন্দা।
আটক পাচারকারীরা হলো, টেকনাফের নতুন পল্লান পাড়ার কলিম উল্লাহ, লম্বরী গ্রামের তারিকুল ইসলাম এবং উখিয়ার ক্যাম্পের বালুখালীর ক্যাম্পের বাসিন্দা এনাম উল্লাহ।
উখিয়াস্থ ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপস্ অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ জানান, গত ৮ জুলাই ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কেফায়েত উল্লাহ (২৪) ও হামিদ হোসেন (২৫) নামে দুই ব্যক্তিকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় মানবপাচারকারীরা। পরে সেখান থেকে হামিদ হোসেন কৌশলে পালিয়ে আসলেও কেফায়েত উল্লাহকে পাঠিয়ে দেয়া হয় মিয়ানমারস্থ পাচারকারীদের কাছে। সেখানে তাকে আটক করে মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। ঘটনা জানার পর ৮ এপিবিএন উখিয়া ও টেকনাফের সম্ভাব্য স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এরপর একে একে আর্ন্তজাতিক মানব পাচারকারীদের চক্রের সদস্যদের আটক করা হয়। তারপর তাদের মাধ্যমে মিয়ানমারে পাচার জিম্মি ওই রোহিঙ্গা যুবককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ‘আরসা’ সন্ত্রাসীরা অর্থ উর্পাজন করতে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার সম্ভবনা রয়েছে। তবুও বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঘটনায় আটক মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপে প্রক্রিয়া চলছে। এপিবিএন এর কাছে আটককৃতরা স্বীকার করেছে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয়দের মিয়ানমার এবং মালয়েশিয়ায় পাচার করে আসছে তারা। প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় ভাবে কাজ করছে।
এএসপি ফারুক আহমদ আরও জানান, আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে উখিয়া- টেকনাফ উপকূল দিয়ে সাগরপথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার হতো জোরেশোরে। পাচারের শিকার লোকজন মালয়েশিয়া পৌঁছালে তাদের মারধর করে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে ছেড়ে দিতেন মানবপাচারকারীরা।
পরবর্তীতে পাচারের শিকার লোকজন অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে সেখানে বিভিন্ন কাজে জড়াতেন। ওই সময়ে সাগর পথে মানবপাচারে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় প্রশাসনের শক্ত অবস্থানে কারনে মানবপাচার বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের দিকে এই রুটে ফের মানবপাচার সক্রিয় হয়ে উঠে। তবে পুরনো এবং নতুন পাচারকারীদের সমন্বয়ে গঠিত মানবপাচারের চক্রটি এখন আগের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশেও সক্রিয় রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে এ চক্রের তিন সদস্য ৮ এপিবিএনের হাতে আটক হলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।