দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ততই ভোটারদের রং বদলাতে শুরু করেছে। ক্ষণিকের জন্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহিন আক্তার আবার ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল বশর মাঠ নিজেদের দখলে নিয়ে। মাঝে মাঝে তার উল্টোটাই হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে উখিয়া উপজেলার ভোটাররাই ভোটের টার্ম কার্ড হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন।
শাহিন আক্তার ও নুরুল বশর এর বাড়ি টেকনাফ উপজেলায় হওয়ায় সেখানে ২ হেভিওয়েট প্রার্থী সমান তালে ভোটের মাঠে লড়াই করে যাচ্ছেন। এর প্রেক্ষিতে সেখানে ২ প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। পক্ষান্তরে উখিয়া উপজেলার ভোট যে প্রার্থীর পক্ষে বেশি পড়বে, সেই প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত বলা যায়। তাই সচেতন মহলে এবার উখিয়া উপজেলার ভোটারদের টার্ম কার্ড হিসেবে বিবেচনা করছেন। উখিয়া উপজেলার ভোটারদের নিজের পক্ষে ধরে রাখতে মরিয়া হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থীই।
তুলনামূলক মূলক ভাবে উখিয়া উপজেলায় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহিন আক্তার উখিয়া উপজেলা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিজ্ঞজনরা। তাদের মতে, প্রথমত তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হওয়ায় বিশাল কর্মী বাহিনী ও দলীয় নেতা কর্মীরা তার পক্ষে নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করছেন। দ্বিতীয়ত, শাহিন আক্তার দেশের অন্যতম আলোচিত সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী হওয়ায় সেটার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে ভোটে। উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় আবদুর রহমান বদির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। একজন দানবীর নেতা হিসেবে আবদুর রহমান বদির পরিচিত ও সুনাম আছে পুরো জেলায়। এর সুফলটাও যাচ্ছে শাহিন আক্তারের ঘরে। তৃতীয়ত, শাহিন আক্তারের পিতার বাড়ি উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নে। তার পিতা মরহুম নুরুল ইসলাম চৌধুরি (ঠান্ডা মিয়া চৌধুরি) উখিয়া উপজেলা পরিষদের ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। নুরুল ইসলাম চৌধুরি একজন মুক্তিযুদ্ধো, একজন শিক্ষাবিদ ও একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসাবে এলাকার সমাদৃত ব্যক্তি। চতুর্থত, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩ বারের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরি, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা ও উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুনেচ্ছা বেবি’র অক্লান্ত পরিশ্রম, ব্যাপক গণসংযোগ, ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চাইতে নৌকার প্রার্থী শাহিন আক্তার উখিয়ায় ভোটের হিসাব-নিকাশে এগিয়ে রয়েছেন।
স্থানীয় ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরি নুরুল হুদা ও কামরুনেচ্ছা বেবিই মূলত নৌকা ও ঈগল প্রতীকের মধ্যে ভোটের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরি এইবার সংসদ নির্বাচন অন্যতম দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, তাছাড়াও তার বড় হুমায়ুন কবির চৌধুরিকক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য। নুরুল হুদা উখিয়া উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। কামরুনেচ্ছা বেবি’র স্বামী আমিনুল হক আমিন হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। উখিয়া এই জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নী প্রার্থী শাহিন আক্তার (নৌকা) কে ভোট যুদ্ধে এগিয়ে দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরি ও নুরুল হুদা পুরুষ ভোটারদের এবং কামরুনেচ্ছা বেবি নারী ভোটারদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহিন আক্তারের পক্ষে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নেপথ্য কারিগর হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।