আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের আশায় ডজনখানেক নেতা ইতিমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এদের বেশিভাগই জনবিচ্ছিন্ন নেতা-কর্মী। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে টেকনাফ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও উখিয়া থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও অন্যদের অবস্থান মুটেও সুবিধাজনক নয়। বিচ্ছিন্ন ভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নেই কোন জনসমর্থন ও নেই কোন দলের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা এবং তারা থাকেন না দলীয় কর্মসূচিতেও।
জানা গেছে, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনটি লক্ষী আসন হিসাবে পরিচিত। উখিয়া উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন এবং টেকনাফ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌর সভা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসন। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসন থেকে যারাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তারাই দলই সরকার গঠন করেছে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহিন আকতার। তিনি সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বড় বোন।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বদি, বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আকতার, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিন বারের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: নুরুল বশর, টেকনাফ উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর পুত্র মাহবুব মোর্শেদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি রাজা শাহ আলম, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আদিল চৌধুরী, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমএনএন এডভোকেট নুর আহমদের পুত্র সোহেল আহমদ বাহাদুর, সাবেক সাংসদ আবদুল গণির পুত্র সাইফুদ্দিন, উখিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ও জেলা পরিষদের সদস্য আশরাফ জাহান কাজল এবং মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। কিন্তু দুদক’র মামলায় তার ৩ বছর সাজা হওয়ায় বিগত সংসদ নির্বাচনের মতো হয়তোবা তিনি এবারও নির্বাচন করতে পারবেন না বলে আশংকা করা হচ্ছে।
বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আকতার রাজনৈতিক মাঠে নতুন হওয়ায় সংসদ সদস্য হিসাবে তেমন সফল হননি, বরং বলা যায় তার সাথে জনগণের কোন যোগাযোগই ছিলো না। বিধায় তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আবার টেকনাফ উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশরের তেমন কোন পরিচিতি এলাকায় নেই বললেই চলে।
টেকনাফ উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ দলীয় কোন্দলে আটকে রয়েছেন। এমনকি তার শ্বশুর জেলা পরিষদের সদস্য জাফর আলমও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি রাজা শাহ আলমের ইতিপূর্বে প্রতিযোগীতা মূলক নির্বাচন করার কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া তার নিজস্ব কোন ভোট ব্যাংক নেই।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শমশের আলম চৌধুরীর পুত্র অধ্যাপক আদিল চৌধুরী ইতিপূর্বে রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে চার চারবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও হেরে গেছেন।
জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর যুবলীগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ৩ বছরের মধ্যে জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যেটাকে সচেতন মহল মনে করছেন তার সাংগঠনিক ব্যর্থতা।
সাবেক সাংসদ আবদুর গণির পুত্র সাইফুদ্দিন রাজনীতির মাঠে এখনও শিশু।
হলদিয়া পালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ জাহান কাজল স্থানীয় দলীয় কোন্দলে জর্জরিত।
মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী নিজ গ্রামেই রাজনৈতিক ভাবে অসহায় ও কোনঠাসা।
অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বড় বোন শাহিন আকতার বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদি তার দুলাভাই ও তার বড় ভাই অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরী জেলা পরিষদের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান এবং তার চাচা অধ্যক্ষ হামিদুর হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান।
তার পিতা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি নিজেও বর্তমানে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার তার ব্যাপক পরিচিতি এবং দলের নেতা কর্মীদের উপর আধিপত্য ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার।
দলীয় নেতা কর্মীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিটি ঘোষনা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী মাঠ পর্যায়ে রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে রাজাপালং ইউনিয়নকে একটি মডেল ইউনিয়ন হিসাবে কক্সবাজার জেলায় পরিচিত করেছেন। যদিও এই ইউনিয়নটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে পড়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি এই বিশাল জনপদে স্থানীয়দের সুযোগ সুবিধা অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষের সুখ দুঃখের ভাগ কাঁধে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন ।
তিনি রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩য় বারের চেয়ারম্যান, উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। এ ছাড়াও তিনি আগে থেকে এই উখিয়া উপজেলায় আওয়ামীলীগের অঙ্গ-সংগঠনেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
দলের তৃণমূল নেতারা জানান, অত্র উপজেলায় নেতার অভাব নেই কিন্তু যতই আলোচনা সমালোচনা থাকুক দিন শেষে চেয়ারম্যার জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীই রাজপথের জন্য উপযুক্ত এবং তৃনমুল কর্মীদের শেষ আশ্রয়স্থল এটাই তিনি প্রমাণ করেছেন বারবার।
জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী এই জনপদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ‘গ্রাম হবে শহর” বাস্তবায়নে গ্রামীণ অবকাঠামোর আমুল পরিবর্তন এনে দিয়েছেন। এক সময়ে যে গ্রামে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হত সেখানে এখন পাকা সড়ক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করে আলোকিত করেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকাগুলো।
জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পিতা উখিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন এতধাঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটানো গুণি ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন।
বাবার সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এই শিক্ষা বিস্তারে রাখছেন অনন্য ভূমিকা। প্রতিষ্ঠা করেছেন অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভূতপূর্ব উন্নয়নে বদলে দিয়েছে প্রায় ৯০ হাজার জনসংখ্যার উখিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন রাজাপালংকে। পাশাপাশি পরিচিতি করেছেন আওয়ামীলীগ সরকার যে, এই দেশের কল্যানময়ী দেশপ্রেমীক সরকার এবং জনগনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সেটি।
জানা যায়, তিনি দীর্ঘ ৮ বছর বিভিন্ন ত্যাগ-তিতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে উখিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে তিনি সভাপতির পদে দায়িত্বভার কাঁধে নেন।
এক সময় বিএনপি অধ্যুষিত জনপদ হিসেবে পরিচিত থাকলেও তার অদম্য নেতৃত্বে আজ আওয়ামী লীগের ঘাটিতে পরিণত হয়েছে উখিয়ার এই সীমান্ত জনপদ।
রাজনৈতিক সচেতন মহল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের প্রতিহত করতে সীমান্ত জনপদের বৌদ্ধ মন্দির গুলো পাহারা দেন তিনি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সহ হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের মানুষের কাছে তিনি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে জননন্দিত।
বিশ্ব স্বীকৃত রোহিঙ্গা মানবিক বিপর্যয়ে ত্রাণ বন্টন, আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করেন তিনি। ফলশ্রুতিতে ডাক পান ২০১৮ সালের ৩০ জুন গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায়। উক্ত সভায় তিনি বক্তব্য রেখে উখিয়া সার্বিক সমস্যা বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সীমান্ত ঘেষা উখিয়া-টেকনাফের অধিকাংশ মানুষেরা মনে করেন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীই বর্তমান সময়ের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে উপযুক্ত ব্যক্তি।
দলীয় নেতা কর্মীরা মনে করেন, জনসেবায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সৃজনশীল ও আধুনিক মননের নেতৃত্ব ধারণ করা এই ব্যক্তিত্ব অদম্য সাহসে অর্জন করেছেন সেই যোগ্যতা।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও জনপ্রতিনিধিত্ব করার মজবুত অভিজ্ঞতার কারণে আগামী নির্বাচনে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। পাশাপাশি তার আত্নীয়তারবদ্ধনকে কাজে লাগাতে পারলে তার বিজয় শুধু সময়ের ব্যাপার হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ০৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১ম বার ২০১১ সালে আনারস প্রতীক নিয়ে ১২৮২৮ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
২য় বারে ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৫৬৭৪ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচত হয়ে ছিলেন।
৩য় বারে ২০২২ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৭৮১০ ভোট টানা তিন বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তাদের আশাবাদ দৃঢ় চিত্তের নেতৃত্ব জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্মার্ট উখিয়া-টেকনাফ বাস্তবায়নে এই জনপদটির আপামর জনতার চাওয়াকে পূরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একান্ত আলাপকালে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, আমি জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ জনগণের দৌড় ঘোড়ায় রাষ্ট্রিয় সেবা পৌঁছে দিতে রাত দিন কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় সভানেত্রী যদি আগামী সংসদ নির্বাচনে যদি আমাকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেন, তাহলে আমি দলকে এই আসনটি উপহার দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ। দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সবার আছে, তবে তাদের অতীত আমলনামা না দেখে দলীয় প্রধান এবার কাউকে মনোনয়ন দেবেন না। যেহেতু আগামী নির্বাচন প্রতিযোগীতা মূলক নির্বাচন হবে, সেহেতু বির্তকিত ও জনবিচ্ছিন্ন নেতারা দলীয় মনোনয়ন পেলে এই গুরুত্বপূর্ণ আসনটি হাতছাড়া হয়ে যাবে।