পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানকে পাঞ্জাব প্রদেশের কুখ্যাত অ্যাটক কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। এটি দেশটির অন্যতম প্রধান কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত কারাগার। সেখানে জঙ্গিদেরও রাখা হয়েছে। তবে এখানে তাঁকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা ভিআইপি হিসেবে উন্নত সেলে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রির মামলায় (তোশাখানা) শনিবার তিন বছরের কারাদণ্ডের ফলে ইমরান খানের রাজনীতির ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়তে পারে। কারণ, দণ্ডিত ব্যক্তি সরকারি পদে থাকতে কিংবা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না এমন আইন রয়েছে দেশটিতে। এ ছাড়া দলীয় প্রধানের পদও হারাতে পারেন পিটিআইপ্রধান। এদিকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর এপি ও ডনের।
কারাগার সূত্র জানিয়েছে, ইমরানকে রাখার জায়গাটি ভিআইপি সেল হলেও সেখানে এসি নেই। তবে একটি ফ্যান, বিছানা, টয়লেট ও গোসলখানা রয়েছে। ইমরান খান ছাড়া এই কারাগারে এর আগে দেশটির কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীকেই রাখা হয়নি।
পিটিআইপ্রধানকে সেখানে নেওয়ার পর উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারটিকে আরও বেশি নিরাপত্তাবেষ্টিত করা হয়েছে। আশপাশের সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁকে তাঁর সমর্থক কিংবা অন্য কোনো গোষ্ঠী মুক্ত করে নিয়ে যেতে না পারে। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যম যাতে কারাগারের ছবি-ভিডিও প্রকাশ করতে না পারে, সে জন্য কারাগার এলাকার বাসাবাড়ির ছাদে সাংবাদিকদের ওঠা বন্ধে বাড়ির মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
সমালোচকরা বলছেন, খানকে কারাগারে রাখার প্রচেষ্টা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে তাঁকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টারই অংশ এটি। এর আগে গত মে মাসেও দুর্নীতির অপর মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খান। কিন্তু এবার গ্রেপ্তারের পর দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে গেছে। খানকে আগেরবার আটকের পর সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ইসলামাবাদের একটি পুলিশ কম্পাউন্ডের সুরম্য গেস্টহাউসে রাখা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, দর্শনার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গেও তাঁকে বৈঠকের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন তিনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত করাগারে।
পিটিআইর আইনজীবী শোয়েব শাহীন বলেছেন, খানের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে গেলে আইনজীবীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, রায়ে ব্যাপক ফাঁকফোকর রয়েছে, তাই পিটিআইর পক্ষ থেকে আপিল করা হবে। মে মাসে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েক দিন পর সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দেন। এবার অবশ্য বিক্ষোভ অনেকটাই কম হয়েছে। এরপরও করাচিসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকালে শনিবার ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। করাচিভিত্তিক বিশ্লেষক তৌসিফ আহমেদ খান বলেন, পরিস্থিতি খানের অনুকূলে নয়। তবে এই কারাদণ্ড এমনি এমনি তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করতে পারবে না। তাঁর মতে, সবই নির্ভর করবে তাঁর সাহস এবং ধৈর্যের ওপর।
রাজনীতিতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ইমরান খানকে ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।
এদিকে, ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সারাবিশ্বের মতো পাকিস্তানেও গণতান্ত্রিক নীতি ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানাই।
সূত্র: সমকাল