ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর – বেসরকারি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’ ইস্যুতে নিজের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট তিনি। পাঠকদের জন্য হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টটি আমাদের বানানরীতি অনুযায়ী আংশিক সংশোধন করে তুলে ধরা হলো-
‘সময় টেলিভিশনের পাঁচজন গণমাধ্যমকর্মীর আকস্মিক চাকরি হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা অসত্য ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ আছে বলে আমার মনে হয় না।’
প্রতিবেদনে যেভাবে এসেছে : ২৬ ডিসেম্বর বিবিসির একটি প্রতিবেদনে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, প্রায় ১৫ জনের একটি দলসহ হাসনাত আব্দুল্লাহ সিটি গ্রুপের হেড অফিসে গিয়ে কয়েকজনকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ার জন্য চাপ দেয়ার কথা বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান। চাকরিচ্যুত পাঁচজন সাংবাদিকের অভিযোগ, গত ১৮ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ কয়েকজনকে নিয়ে সময় টিভির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন এবং টিভি স্টেশনের ১০ জনের নামের একটি তালিকা দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করতে চাপ দেন।
প্রকৃত ঘটনা : পুরো দেশবাসী জানে ফ্যাসিবাদী হাসিনার নিকৃষ্ট মুখপাত্র হিসেবে বছরের পর বছর ধরে ফ্যাসিবাদের প্রপাগান্ডা সেল হিসেবে কাজ করেছে বেসরকারি সময় টেলিভিশন। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলীয় নেতাদের নিয়ে নিয়মিত ভুয়া ও কুরুচিকর প্রতিবেদন করাই ছিল সময় টিভির কাজ।
এসব কার্যক্রম নিয়ে আমরা আগে থেকেই সচেতন ও বিশুদ্ধ ছিলাম। সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন সময় এবং এখন টিভির কয়েকজন সাংবাদিক আমাদের কিছুটা প্ররোচিত করে গত ১৭ ডিসেম্বর বিকাল চারটায় সময় টিভির এমডি মি. হাসানের কার্যালয়ে নিয়ে যান। এটা যে একটা চক্রান্ত ছিল, তা আমরা তখন বুঝতে পারিনি। সেখানে আমরা মাত্র ৩০ মিনিট ওনার সাথে আলাপ করে বেরিয়ে এসেছিলাম। অথচ বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আমি ১৮ ডিসেম্বর গিয়েছিলাম। এটি থেকে পরিষ্কার যে, এ ঘটনার সত্যতা বিবিসি বাংলা ভালোভাবে যাচাই করেনি।
সময় টেলিভিশনের একজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মি. হাসানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। আমাদের সংক্ষিপ্ত বৈঠকে ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতিতে সময় টেলিভিশনে চলমান বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছিল। সেখানে আমিসহ উপস্থিত ব্যক্তিরা সঠিক সংবাদ প্রচার করে ফ্যাক্ট ভিত্তিক সাংবাদিকতার আহ্বান জানিয়েছিলাম। প্রোপাগান্ডামূলক সাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করেছিলাম।
আমি দায়িত্ব নিয়ে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, সেখানে আমি কোনো সাংবাদিকের তালিকা দিইনি। চাকরি থেকে বাদ দেয়া সাংবাদিকদের ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। বার্তা সংস্থা এএফপি এবং বিবিসি বাংলার কাছে আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি আমি সিটি গ্রুপ এবং সময় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে কোনো সংবাদিকের তালিকা দিয়েছি এবং কাউকে বরখাস্ত করতে চাপ দিয়েছি সেটির স্বপক্ষে যদি তাদের কাছে কোনো প্রমাণ থেকে থাকে সেটি যেন তারা হাজির করেন। যদি হাজির করতে না পারেন, তবে তা যেন স্বীকার করেন।
আমি মনে করে ‘মি. হাসান অভিযোগ করেছেন’ এটাই এ ধরণের একটি প্রতিবেদনের মূল ভিত্তি হতে পারে না। কারণ মি. হাসান যখন আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন তখন বলছেন, আমি কোনো ছাঁটাইয়ের তালিকা তাকে সরবরাহ করিনি বা এমন কোনো কথা বলিনি। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে আমি প্রমাণ দিতে পারব। তবে এটি স্পষ্ট যে, সিটি গ্রুপের মালিক মি. হাসান আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অসত্য এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন, যা তার মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে।
আমি দাবি জানাই : ১. সময় টেলিভিশনের যে ৫ জন সাংবাদিককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে- এ ব্যাপারে আমার দূরতম সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি জোর দাবি জানাই, এই পাঁচজনকে চাকরিতে পূনর্বহালের।
২. যারা প্রকৃতভাবে এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
৩. সিটি গ্রুপের মালিক মি. হাসান অসত্য তথ্য দিয়ে আমার চরিত্র হননের যে ষড়যন্ত্র করছেন, তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. বিবিসির প্রতিবেদন প্রকাশের পর মি. হাসান বারবার বিভিন্ন প্রতিবেদককে দিয়ে আমার সাথে বারবার আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছেন। যেগুলোর স্বপক্ষে আমার কাছে পরিষ্কার প্রমাণ রয়েছে। আমি তাদের বলেছি তিনি যদি বিবিসিকে এমন বক্তব্য না দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠাতে।
আমার বক্তব্য : আমি কখনও কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলাম না এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি সবসময় গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। ভবিষ্যতেও দাঁড়াব।
এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়ায় আমি পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। মূলত সিটি গ্রুপ এবং সময় টিভির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আমাকে জড়িয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলের নোংরা চেষ্টা করা হয়েছে।
তবে, আমি অনুরোধ করছি, মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে আমার ব্যক্তি ও সামাজিক অবস্থান ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা বন্ধ করা হোক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় এবং এই ষড়যন্ত্রের শিকার সকলের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪