আলোচনায় এখন কক্সবাজার বিমানবন্দর। গত ৩০ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট উড্ডয়নের সময় রানওয়েতে চলে আসে দুটি গরু। উড়োজাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেই দুটি গরু ঘটনাস্থলেই মারাও যায়। প্রশ্ন উঠছে, বিমানবন্দরের রানওয়েতে গরু এলো কি করে? বিমানবন্দর কি অরক্ষিত? বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের পাইলট ও কর্মকর্তারা বলছেন, এটি প্রথম ঘটনা নয়, রানওয়েতে কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণী চলাচলের ঘটনা প্রায়ই ঘটেছে। এর আগেও বিমানের সঙ্গে আঘাতে কুকুরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় আবারও একই ঘটনা ঘটেছে। ফলে দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কিত পাইলটরা।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে কুকুরের উৎপাত, আতঙ্কে পাইলটরা এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি। সে সময়ে বিমানবন্দরের তৎকালীন ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেছিলেন, বিমানবন্দরে সম্প্রসারণের কাজ চলার কারণে ফাঁকা জায়গা দিয়ে কখনও কখনও বিভিন্ন প্রাণী প্রবেশ করে। তবে সেটি বন্ধের ব্যবস্থা করার কথা তিনি বলেছিলেন।
তবে প্রায় দুই বছর পরও প্রায় একই বক্তব্য কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। বিমানবন্দরটির বর্তমান ম্যানেজার মো. গোলাম মোর্তুজা হোসেন বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আমাদের এখানে উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি সীমানা প্রাচীরেরও কাজ চলছে। সব জায়গায় আমরা এখনও কাজ শেষ করতে পারিনি। তবে এ ঘটনা তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে সরকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রূপান্তর করতে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়েটি হবে এই বিমানবন্দরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিমানবন্দরটিকে আঞ্চলিক হাব করতে গুরুত্ব দিয়েছেন। শুধু রানওয়ে নয়, হবে নতুন টার্মিনাল ভবন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এখনও দুর্বল।
জানা গেছে, বিমানবন্দর অ্যাপ্রোন এলাকায় কুকুর বিড়ালের বিচরণ নিত্যদিনের ঘটনা। বিমানবন্দরটির কোথাও কোথাও নেই উচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনী। নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যাও কম থাকায় এমন ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। বিমানবন্দরের আশেপাশের মানুষজনও ঢুকে পড়েন বিমানবন্দর এলাকায়।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। বুধবার (১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিমানবন্দরের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে কক্সবাজারের বিমানবন্দরে ফ্লাইটের সংখ্যা বেশি। পর্যটন গন্তব্য হওয়ায় যাত্রী বেশি। ফলে কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট বাড়িয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। তবে কক্সবাজারের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত এয়ারলাইন্সগুলো। বিভিন্ন সময়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বেবিচকে চিঠিও দিয়েছে তারা।
এ প্রসঙ্গে নভোএয়ারের চিফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন আশফাকুর রহমান খান বলেন, বিমান অবতরণ কিংবা উড্ডয়নের সময়টা যে কোন সামান্য আঘাতও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ছোট পাখিও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সে জায়গা কুকুর, গরু হলে তো শঙ্কা আরও বেশি। কক্সবাজার বিমানবন্দর বন্যপ্রাণীর বিচরণ নিয়ে শঙ্কা বেশি। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এ ধরনের ঝুঁকি দূর করতে আমরা সিভিল এভিয়েশনকে জানিয়েছি।
কক্সবাজারের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে কক্সবাজার গিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য (নিরাপত্তা) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফী। তিনি বলেন, কক্সবাজারের ঘটনাটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে কোনও ঘাটতি আছে কিনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে আরও জোরদার করা যায়, সেটি আমরা দেখবো। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন