এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
একুশ দিন আগে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীতে সৃষ্ট বন্যার তাণ্ডবে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসি। গতকাল দুপুরে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় এলাকাবাসি, কৃষক ও শ্রমজীবি মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে পেকুয়া উপজেলার অবহেলিত মেহেরনামার ২৫ হাজার জনগণের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিতে অবিলম্বে ভেঙে যাওয়া অংশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
মানববন্ধন শেষে পেকুয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর তীরের জনপদ মেহেরনামা ছিরাদিয়া পয়েন্টে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সম্প্রতিসময়ে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ফাসের গুদাম এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতির শিকার হওয়া কৃষকদের ভুর্তকি, বন্যাদুর্গত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রান সহায়তা নিশ্চিত, ভেঙে তছনছ হয়ে পড়া রাস্তাঘাট মেরামত এবং মেহেরনামাকে ইউনিয়ন অনুমোদন দিয়ে সরকারের উন্নয়ন বৈষম্য থেকে বাদ পড়ার অভিশাপমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করে উপস্থিত এলাকাবাসি গণস্বাক্ষরে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
একই বিষয়ে স্মারকলিপিতে আলাদাভাবে অনুলিপি দেওয়া হয়েছে সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রস্তাবিত মেহেরনামা ইউনিয়ন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষানুরাগী নাছির উদ্দিন বাদশা।
মানববন্ধনে উপস্থিত পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দীন বাদশা বলেন, স্বাধীনতার পর ৫২ বছর সময় অতিবাহিত হলেও ২৫ হাজার জনগনের জনপদ মেহেরনামা এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে। এখানে চলাচলের রাস্তা নেই বললেই চলে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাডি ঢলের পানিতে মাতামুহুরী অরক্ষিত বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে নদীর তীরের জনপদ মেহেরনামার ২৫ হাজার জনগন পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বৃষ্টিপাত বেড়ে গেলে পরবর্তী সময়ে সারা পেকুয়ায় বন্যার আবির্ভাব ঘটে।
এভাবে প্রতিবছর বর্ষাকালে বন্যার সময় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মছন্যাকাটা, আধাখালী, মুরারপাডা ,নন্দীর পাডা, চৈরভাঙ্গা, পুর্ব মেহেরনামা এলাকার পরিবারগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ওইসময় দুর্বিসহ অবস্থায় পড়ে যান পেকুয়ার মানুষ।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যায় মেহেরনামার ১২ শ হেক্টর, ৩ হাজার একর জমি চাষ হবে কি এখনো অনিশ্চিত। যার কারন ভাঙা বেড়িবাঁধ নির্মানের কোন উদ্যোগ নেয়নি পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়া বন্যায় পানিবন্দী সময় মেহেরনামার অবহেলিত ২৫ হাজার জনগনের ২ হাজার মত লোকের কাছেও সরকারী ত্রান সহায়তা পৌঁছেনি বলে মন্তব্য করেছেন নাছির উদ্দিন বাদশা।
মানববন্ধনে এলাকাবাসি, মেহেরনামার অতীব গুরুত্বপূর্ণ সডক আধাখালী- মছন্যাকাটা সডক,পূর্ব মেহেরনামা সডক, তৈল্যাকাটা সডক, নন্দীর পাডা সড়ক বর্তমানে চলাচলে নাজুক অবস্থা হয়েছে। দুর্ভোগ থেকে জনগণের চলাচল নিশ্চিত করতে সড়কগুলো সংস্কারসহ পাকাকরনের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বন্যায় ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজার কৃষককে সরকারি প্রনোদনা সহ বন্যাকবলিত জনগনের মাঝে জরুরীভাবে ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ এবং মেহেরনামার আশ্রয়ন অরিনুমা আবাসন সংস্কারসহ এখানকার বাসিন্দাদের জন্য সরকারী ত্রান সহায়তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন বাদশা বলেন, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মধ্যে ১২ কিলোমিটার আয়তনের মেহেরনামা এলাকাটি ৭,৮,৯,৬ একাংশ নিয়ে ২৫ হাজার জনগণের বসবাস। মেহেরনামাকে স্বতন্ত্র ইউনিয়ন বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের পাশে ৭ কিলোমিটার আয়তনের ১৮ হাজার জনগনের শিলখালী ইউনিয়নে সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। অথচ দায়িত্বশীল নেতৃত্ব বা অভিভাবক না থাকায় মেহেরনামা জনপদ আজও অবহেলিত রয়ে গেছে। আমরা মেহেরনামার মানুষ সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির সুফল পেতে চাই। অবহেলিত জনপদ
মেহেরনামাকে ইউনিয়ন অনুমোদনের দাবি জানাই।
মানববন্ধন স্থানীয় এলাকাবাসি বলেছেন, একুশদিন আগে প্রথমদফা বন্যার পর কক্সবাজার ১ আসনের এমপি আলহাজ্ব জাফর আলম, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, সদর ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহসহ কেউ মেহেরনামা এলাকার দুর্গত মানুষকে দেখতে আসেনি। তবে ওইসময় স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনা খাবার ও খিছুডি দিয়েছেন যা জনগনের তুলনায় অপ্রতুল।
জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পুর্বিতা চাকমা বলেন , মেহেরনামা এলাকাটি অবহেলিত জনপদ। বন্যার সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ওই এলাকার দুর্গত মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের অর্থে খিচুডি বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি সবধরনের সহায়তা ওই জনপদের মানুষের মাঝে নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে গনশুনানী সম্পন্ন করে মেহেরনামাকে ইউনিয়ন অনুমোদনের জন্য প্রেরন করা হয়েছে।
স্মারকলিপির আলোকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সমুহ টেকসই উন্নয়নে সংস্কার করনের বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।