মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

অবশেষে ৭২ ঘন্টার ব্যবধানে মেরামত শেষে সচল মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা রাবারড্যাম

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২

অনিশ্চয়তা কেটে গেছে ৭০ হাজার একর জমির চাষাবাদ

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া
সামুদ্রিক জোয়ারের পানির প্রবল চাপে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টে পাউবো নির্মিত রাবার ড্যামের ছিড়ে যাওয়া দুই নাম্বার স্পানের রাবার অবশেষে ৭২ ঘন্টার ব্যবধানে আবারও সচল করা সম্ভব হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্তাবধানে প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা টানা তিনদিন মেরামত কাজ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটার দিকে ফের রাবার ড্যামটি ফুলানোর মাধ্যমে সচল করতে সক্ষম হয়েছে।
আর রাবার ড্যামটি চালুর মধ্যদিয়ে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার অন্তত ৭০ হাজার একর জমিতে সেচ সুবিধা নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকা বোরো ধান ও সবজি চাষে কেটে গেছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। এতে কৃষককুলে ফিরেছে স্বস্থি। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন। তিনি বলেন, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের সঠিক নজরদারির কল্যাণে অল্পসময়ের মধ্যে মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যামটির মেরামত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। ড্যামের ছিড়ে যাওয়া স্প্যানের রাবার জোড়া লাগানোর মাধ্যমে সচল হওয়ায় চকরিয়া উপজেলার ৪৩ হাজার একর জমির বোরো ধান ও সাত হাজার একর জমির সবজি চাষে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে তৈরী হওয়া অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। পাশাপাশি পেকুয়া উপজেলার প্রায় ২০ হাজার একর জমিতেও চাষাবাদ নিয়ে কেটে গেছে কৃষককুলের শঙ্কা।
বাঘগুজারা রাবার ড্যামের সুপারভাইজার আবদুর রহিম বলেন, গত এপ্রিল দুপুর ১১ টার দিকে সামুদ্রিক জোয়ারের পানির প্রবল চাপে বাঘগুজারা রাবারড্যামের দুই নাম্বার স্পান ছিড়ে যায়। এরপর থেকে মাতামুহুরী নদীর নীচের অংশ হয়ে সামুদ্রিক লবণ পানি প্রবাহিত করতে শুরু করে পুরো নদীতে। এই বিষয়টি তাৎক্ষনিক কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়। পরবর্তীতে কৃষকদের অপুরণীয় ক্ষতি হবার বিষয়টি আমলে নিয়ে পাউবো তড়িৎ গতিতে রাবার ড্যামের মেরামত কাজ শুরু করেন। টানা তিনদিন মেরামত কাজ শেষে বৃহস্পতিবার ৭ এপ্রিল দুপুরে ছিঁেড় যাওয়া স্থানের রাবার পুনরায় জোড়া লাগানো সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, মেরামত কাজ শেষ হবার পর থেকে রাবারের উপর দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে আর সামুদ্রিক লবণ পানি আর নদীতে প্রবাহিত হচ্ছেনা। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাবার ফুলানো কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চলছে রাবার পাইয়ার এর সাথে নাট বন্টু পিটিংয়ের কাজ।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের দিকে পানি উন্নয়ন র্বোড মাতামুহুরী নদীর মিঠা পানি আটকিয়ে শুস্ক মৌসুমে বোরো চাষের জন্য মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া উপজেলার অংশে পালাকাটা, চকরিয়া-পেকুয়া অংশের বাঘগুজারা পয়েন্টে আলাদা দুইটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। মাতামুহুরী নদীতে রাবার ড্যামগুলো নির্মাণ করার মাধ্যমে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে দুই উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার একর জমিতে ইরি বোরো চাষ ও রবি শষ্যের চাষ হয়ে আসছে।
ইরি বোরো চাষ শেষে প্রতিবছরের মে মাসের শুরুর দিকে রাবার ড্যামগুলোর রাবার ব্যাগ আবার নামিয়ে দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু বোরো চাষে সেচসুবিধা নিতে আরও একমাস সময় থাকলেও সোমবার (৪ এপ্রিল) বেলা এগারটার দিকে হঠাৎ করে বাঘগুজারা রাবার ড্যামটির দুই নাম্বার স্প্যানের রাবার ছিঁড়ে যায়। এতে করে নদীর ওপরের দিকে আটকানো মিঠাপানি বের হয়ে যাচ্ছিল, আবার জোয়ারের সময় ভেতরে প্রবাহিত হচ্ছিল লবনাক্ত পানি।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার শাখা প্রকৌশলী (এসও) জামাল মোরশেদ বলেন, বাঘগুজারা রাবার ড্যামটির দুই নাম্বার স্প্যানের রাবার ছিঁড়ে নদীর ওপরের দিকে আটকানো মিঠাপানি বের হওয়া আবার জোয়ারের সময় ভেতরে লবনাক্ত পানি প্রবাহিত হওয়ার ঘটনায় কৃষক ছাড়াও প্রশাসনের সবাইকে ভাবিয়ে তুলে।
প্রায় ১৩বছর আগে ২০০৯ সালে লাগানো ড্যামের রাবারগুলোর সক্ষমতা ইতোমধ্যে নষ্ঠ হয়ে গেছে। সেকারণে জোয়ারের সময় পানির প্রবল চাপে স্পানের রাবার ছিঁেড় যায়। প্রাথমিক তদন্তে সেটি প্রতিয়মান হয়েছে।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর তাৎক্ষনিক নির্দেশে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। পাশাপাশি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে পাউবোর প্রকৌশল বিভাগের লোকজন বাঘগুজারা রাবার ড্যাম পয়েন্টে পৌঁছে। এরপর প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা টানা তিনদিন মেরামত কাজ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটার দিকে ফের রাবার ড্যামটি ফুলানোর মাধ্যমে সচল করতে সক্ষম হয়েছে।
পাউবোর শাখা প্রকৌশলী (এসও) জামাল মোরশেদ বলেন, এখন মেরামত কাজ শেষ হবার পর থেকে রাবারের উপর দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে আর সামুদ্রিক লবণ পানি আর নদীতে প্রবাহিত হচ্ছেনা। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাবার ফুলানো কাজ শুরু হয়েছে। এতে করে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার কৃষকদের মাঝে বোরো ধান ও সবজি চাষাবাদে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে তৈরী হওয়া অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।


আরো খবর: