মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৮ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

অতীতের ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫


ঢাকা, ০৫ জানুয়ারি – অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ এখনো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ শাসনামলের দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে এবং তাদের বাস্তবায়িত বিদেশি বিনিয়োগ বিঘ্নকারী ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টিকারী ত্রুটিপূর্ণ নীতি-কৌশলের খেসারত দিচ্ছে।

রোববার (০৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ‘সৌদি-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি : প্রবণতা, মূল চ্যালেঞ্জ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের অতীতের দুর্নীতি ও বিভিন্ন নীতিগত ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হচ্ছে। অতীতের এই নীতিগত ত্রুটির কারণে সৌদি আরবের আরামকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংসহ বহু বিদেশি বৃহৎ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের কাছে এসেছিল, কিন্তু তাদের ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি। অবশেষে স্যামসাং ভিয়েতনামে চলে গেছে। এগুলো ছিল নীতিগত ভুল সিদ্ধান্ত। এগুলোকে এখনই সংশোধন করা প্রয়োজন।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, এক থেকে দেড় বছরের সংক্ষিপ্ত মেয়াদে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান ও অন্য কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে ড. সালেহউদ্দিন দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরব আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমানে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর আরও প্রবৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

তহবিল সুরক্ষিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি বিভিন্ন উৎস থেকে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে, শিগগিরই আরও ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, কিছু কোম্পানির কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের শেয়ারের দাম বাড়ছে। বাজারের সচ্ছতা নিশ্চিতে এ ধরনের অসঙ্গতিগুলোর অবশ্যই নিরসন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, অর্থনৈতিক সুযোগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এটি একটি বাস্তবতা, যা আমাদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা দাবি করে আসছি যে, আমাদের দেশ সবচেয়ে বিনিয়োগবান্ধব। কিন্তু বাস্তবে এটি সবসময় সত্য নয়।

তৌহিদ বলেন, সমস্যাটি সমাধানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা সহজ করতে সচেষ্ট।

সৌদি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যদি সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসেন, তবে তারা একটি অনুকূল পরিবেশ পাবেন।

মানবসম্পদ খাতের ব্যাপারে তৌহিদ বলেন, দেশের কর্মীবাহিনীকে আরও দক্ষ হতে হবে। কারণ শুধু বিদেশে নয়, দেশের অভ্যন্তরেও বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। এটা শুধু সৌদি আরবের জন্যই সমস্যা নয়, অন্যান্য দেশের জন্যও আমরা চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরি করছি না। আমরা যতবেশি দক্ষ কর্মী তৈরি করব, দেশের জন্য তারা ততবেশি অবদান রাখতে পারবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য আমাদের দক্ষতা-ভিত্তিক প্রশিক্ষণের উন্নয়ন প্রয়োজন।

সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানি আরামকো বঙ্গোপসাগরে তেল শোধনাগার স্থাপনে বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী। যদি এখানে একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করা হয় ও তেল পণ্য তৈরি করা হয়, তবে তারা এসব পণ্য বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলে সরবরাহ করতে পারবে।

যদি চট্টগ্রাম ও জেদ্দা বা দাম্মামের মধ্যে একটি সামুদ্রিক রুট স্থাপন করা হয়, তবে এটি বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিফাইনারির পণ্য চীন, ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আমাদের কিছু সাফল্যের গল্প আছে। আমাদের আন্তর্জাতিক কোম্পানি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা টার্মিনাল পরিচালনা করছে এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে কাজ করতে আগ্রহী।

বিদায়ী সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতার কথাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আরামকো বাংলাদেশে তিনবার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠায়। কিন্তু সে সময় তারা কেউ গ্রহণ করেনি। যাইহোক, আমরা অতীত সম্পর্কে কথা বলব না। আমরা ভবিষ্যতের বিষয়ে কথা বলব।

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

সূত্র: কালবেলা
আইএ/ ০৫ জানুয়ারি ২০২৪



আরো খবর: