শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২২ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামিরা কে কোথায়

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩

ঢাকা, ২১ আগস্ট – বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাজাপ্রাপ্ত ১৬ আসামি এখনও পলাতক। এদের একজন ছাড়া বাকিরা কে কোথায় আছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজার মুখোমুখি করার চেষ্টা করছে সরকার।

২০০৪ সালের সেই গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন। আহত কয়েকশ’। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় দেড় যুগ আগের সেই মর্মান্তিক ঘটনার বিচার নিম্ন আদালতে শেষ হলেও উচ্চ আদালতে এখনও বিচারাধীন। এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫২ আসামির মধ্যে কারাগারে আটক আছে ৩২ জন। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তিন আসামির। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট মারা গেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম।

শুরুতে ১৮ জন আসামি পলাতক থাকলেও পরে দু’জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। অন্য ১৬ জন আসামি এখনও পলাতক। এরমধ্যে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছে। পলাতক আসামিদের মধ্যে প্রথমেই আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নাম। পুলিশের খাতায় সবাইকে পলাতক দেখানো হলেও তারেক রহমান যে লন্ডনে রয়েছেন সেটা সবার জানা। তবে অন্য পলাতক আসামিদের খুঁজে বের করতে পুলিশ গত ১৯ বছর ধরে তৎপরতা চালালেও তাদের অবস্থানের সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি।

তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে তাকে ‘পলাতক’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির মামলায় এরই মধ্যে তার সাজা হয়েছে।

লুৎফুজ্জামান বাবর

বিএনপি সরকারের সময় তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এরই মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবরকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

আব্দুস সালাম পিন্টু

বিএনপি সরকারের সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী ছিলেন আব্দুস সালাম পিন্টু। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর পার্ট-২ এ বন্দি রয়েছেন।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসামি। কিন্তু যুদ্ধাপরাধ মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।

মুফতি আবদুল হান্নান

হরকাতুল জিহাদের নেতা ছিলেন মুফতি আবদুল হান্নান । গ্রেনেড হামলা মামলার মূল আসামি। তার স্বীকারোক্তির পর তারেক রহমান এবং লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেককেই এ মামলার আসামি করা হয়। সিলেটে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যার দায়ে ২০১৭ সালে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

মাওলানা তাজউদ্দিন

বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু তার ভাই। গ্রেনেড হামলার পর তাকে ভুয়া পাসপোর্টের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি পাকিস্তানে পলাতক আছেন বলে জানা যায়। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তাকে।

হারিছ চৌধুরী

বিএনপি সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত নয়। জানা গেছে কিছুদিন আগে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে মারা গেছেন। তবে ইন্টারপোলের রেড নোটিশে এখনও তার নাম ঝুলছে পলাতক আসামি হিসেবে।

মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী

বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাকে আটক করা হয়। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআই-এর প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এরই মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা বা এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কিছুদিন আগে তিনি মারা গেছেন।

লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক এ কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার ভাগ্নে। এ মামলায় দীর্ঘ সময় তিনি জামিনে থাকলেও এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন।

শহুদুল হক

গ্রেনেড হামলার সময় পুলিশপ্রধান ছিলেন শহুদুল হক। বর্তমানে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে কোথাও আত্মগোপনে আছেন। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

মোহাম্মদ আশরাফুল হুদা

গ্রেনেড হামলার সময় আশরাফুল হুদা ঢাকার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ চার মাসেরও কম সময় পুলিশপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাকে। তিনি কারাভোগ করে গুলশানের একটি বাসায় থাকেন।

খোদাবক্স চৌধুরী

গ্রেনেড হামলার সময় অতিরিক্ত পুলিশপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন খোদাবক্স চৌধুরী। পরবর্তীতে তিনি পুলিশপ্রধান হন। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে বসবাস করছেন।

শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ

বিএনপির টিকিটে কুমিল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। মামলার অভিযোগপত্রে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে। ধারণা করা হয়, তিনি সৌদি আরবে পলাতক আছেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন

বিএনপি সরকারের সময় তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআই-এর দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি ছিলেন। পরবর্তীতে সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি ডিজিএফআই-এর প্রধান হয়েছিলেন। সে সরকারের মেয়াদ শেষ হলে তিনি আমেরিকায় চলে যান। মামলার কাগজপত্রে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম

সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সাবেক সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান এবং এএসপি আব্দুর রশিদ বর্তমানে কারাগারে আছেন। এ তিনজন বিএনপি সরকারের সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন।

গ্রেনেড হামলা মামলার আরেক আসামি হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ পলাতক রয়েছেন। তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

কারাগারের সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ বাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন ঢাকা এবং গাজীপুর কাশিমপুরের পার্ট-২ এবং হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন ।

বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. ইকবাল, রাতুল আহমেদ, মাওলানা লিটন, মো. খলিল ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন।

এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত ১১ জন সাজা খেটে বের হয়ে গেছেন। এর মধ্যে পুলিশের সাবেক আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরী বর্তমানে দুবাইয়ে আছেন, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা গুলশানে থাকেন, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমীন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, জোট সরকার আমলের তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মহিউল ইসলাম বলেন, গ্রেনেড হামলা মামলায় ১৬ জন আসামি পলাতক থাকার কথা শুনেছি। এদের মধ্যে ১০ জন দেশের মধ্যে পলাতক রয়েছে। আর ছয়জন বিদেশে পলাতক রয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশে নাম রয়েছে।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল

 


আরো খবর: