শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

১৮ জেলেকে ফেরত দেয়নি মিয়ানমার, আতঙ্ক জেলে পরিবারগুলোতে !

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

হেলাল উদ্দিন টেকনাফ ::

বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে ধরে নিয়ে যাওয়ার ১৮জেলেকে এখনও ফেরত দেয়নি মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ(বিজিপি)কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন জেলে পরিবারগুলো।

গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকা থেকে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মিয়ানমারে নিয়ে যান সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা।

এ ঘটনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পক্ষ থেকে জেলেদের ফেরত চেয়ে ভাইবারের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এতথ্যটি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ ২বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)পারভেজ চৌধুরী সরেজমিনে জেলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি তাদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া যান।পরিবারগুলো খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ও কিছু অর্থ সহায়তা দেওয়া দেন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরতের বিষয়ে বিজিবি কতৃপক্ষকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।জেলেদেররে ফেরত নিয়ে আসার বিষয়ে পরিবারগুলোকে আশ্বস্ত করছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া সরেজমিনে দেখা যায়, জালিয়াপাড়া এলাকায় ঢুকতেই দূর থেকে কানের ভেসে আসে বিলাপের উচ্চস্তরের শব্দ।“ও আল্লাহ মর পোয়া রে, তুয়ারা আনি দ না।”(আল্লাহ আর ছেলেকে এনে দাও)।বলে বিলাপ করছিলেন হেলালের মা নুর বেগম।শুধু তিনি নয়। আরও ১৭জন অনেকের ছেলে-মেয়ে,বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়-স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।ধরে নিয়ে যাওয়ার জেলেদের ফেরতের স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জেলে পরিবার।

বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে ফেরার পথে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চারটি নৌকাসহ ১৮বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ(বিজিপি)|

গত মঙ্গলবার বিকেলে টেকনাফ-সেন্টমাটিন নৌপথে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে ধরে নেওয়া হয়।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়া ১৮জেলে কোথায় এবং কিভাবে আছে সেটা জানে না পরিবার গুলো।তাই গ্রাম জুড়ে চলছে বিলাপের শব্দ।আর পরিবারগুলোতে বিরাজ করছে আতঙ্কে।জেলেদের ফেরত আনার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন,জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মিয়ানমার বিজিপির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।প্রথমে কোনো ধরনের সাড়া না দিলেও পরবতীতে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।দ্রুত জেলেদের ফেরত দিতে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

যেসব জেলেকে ধরে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার মোহাম্মদ জসিম (২৫), সাইফুল ইসলাম (২৩), মো. ফায়সাল (২৩), আবু তাহের (২২), মো. ইসমাইল (২০), মো. ইসহাক (২৪), আবদুর রহমান (২৪), নুর কালাম (২৬), মো. হোসেন (২২), মোহাম্মদ হাসমত (২৫), মোহাম্মদ আকবর (২৩), নজিম উল্লাহ (১৯), মোহাম্মদ রফিক (২০), মোহাম্মদ সাব্বির (২৫), মোহাম্মদ হেলাল (২৫), রেজাউল করিম (১৮), মোহাম্মদ রমজান (১৬) ও মো. জামাল (২১)|

আবদুস সালাম বলেন, মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে কাঠবোঝাই ডুবে যাওয়া ট্রলারের উদ্ধারকাজে অংশ নেন এসব জেলে। এতে তাঁরা কিছু কাঠও উদ্ধার করেন। পরে চারটি নৌকাসহ ১৮ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার বিজিপি। এ ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে|

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)পারভেজ চৌধুরী বলেন,চারটি নৌকাসহ ১৮ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চপযায়ে অবহিত করা হয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া ক্ষুদ্র মৎস্য জীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল গনি বলেন,ধরে নিয়ে যাওয়া ১৮জেলে সকলেই বাংলাদেশের বাসিন্দা। মিয়ানমার কতৃপক্ষ কোথায় ধরে নিয়ে গেছে। সেটার সুনির্দিষ্টভাবে জানতে না পারায় পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।জেলে গুলোকে ফেরত চেয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন পরিবারগুলো।


আরো খবর: