ইসলামবাদ, ১৩ জুলাই – বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শেষ দিন জানিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। বুধবার রাজধানী ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে শেহবাজ শরিফ ঘোষণা দেন, চলতি বছর ১৪ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করবে তার সরকার।
বুধবার ইসলামাবাদের ওই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে চাই যে আগামী ১৪ আগস্ট হতে যাচ্ছে বর্তমান সরকারের শেষ দিন। পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আমি আশা করি, নির্বাচনে জিতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক— তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে।’
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল তৎকালীন পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলো। সেই প্রস্তাবের ওপর আয়োজিত ভোটে হেরে গত বছর ১০ এপ্রিল ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।
পিটিআই ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ- নওয়াজের (পিএমএলএন) নেতৃত্বে জাতীয় ক্ষমতায় আসীন হয় বর্তমান জোট সরকার এবং পিএমএলএনের চেয়ারম্যান শেহবাজ শরিফ হন নতুন প্রধানমন্ত্রী। জোটের অন্য দুই শরিকের নাম পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারের মেয়াদের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেহবাজ শরিফ।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ ঔপিনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিল পাকিস্তান। সেই থেকে এই দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে দেশটি। বর্তমান জোট সরকারের শেষ দিন হিসেবেও এই দিনটিকেই বেছে নিল শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার।
শেহবাজ শরিফ যদিও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ব্যাপারটি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, তবে দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে— চলতি বছর অক্টোবরের শেষ দিকে বা নভেম্বরের প্রথম দিকে হতে পারে নির্বাচন।
সম্প্রতি আল-কাদির দুর্নীতি মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে ইমরান খানের গ্রেপ্তার ও তারপর দেশটিতে ঘটে যাওয়া অভূতপূর্ব সহিংস বিক্ষোভের পর পাকিস্তানে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল যে, শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার তার বৈধ সময়সীমা পেরিয়ে আরও এক বছর ক্ষমতা নিজেদের দখলে রাখবে।
বুধবারের ঘোষণার মধ্যে দিয়ে সেসব গুঞ্জনকে কার্যত থামিয়ে দিলেন শেহবাজ ।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে তৎকালীন পিটিআই সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণচুক্তি করেছিল দেশটি। ঋণের কয়েকটি কিস্তি পাকিস্তানে এসেওছিল। কিন্তু পিটিআই সরকার ঋণচুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় পরে কিস্তি প্রদান স্থগিত করে আইএমএফ।
আইএমএফের ঋণের কিস্তি স্থগিত হওয়া এবং ডলারের মজুত তলানিতে নেমে যাওয়ায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সময় থেকে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছিল দেশটিতে, যা তার বিদায়ের পর ধীরে ধীরে আরও তীব্র রূপ নেয়। ২০২২ সালে দেশজুড়ে প্রলয়ঙ্কারী বন্য সেই সংকটকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
বর্তমান জোট সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ভয়াবহ সেই অর্থনৈতিক সংকটকে সামাল দেওয়া এবং আইএমএফের স্থগিত ঋণচুক্তি ফের সচল করা। সম্প্রতি আইএমএফ অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তানকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ১৩ জুলাই ২০২৩