বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রথম দিনেই ৩৬ বেওয়ারিশ কুকুর পুনর্বাসন

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২

হেলাল উদ্দিন টেকনাফ ::

সমুদ্রসৈকতজুড়ে বেওয়ারিশ কুকুরের অবাধ বিচরণের কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা প্রায়ই সময় আতঙ্কে থাকেন। এ ছাড়া সৈকতে ডিম ছাড়তে আসা মা কচ্ছপও কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে। কুকুরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে দ্বীপ থেকে বেওয়ারিশ কুকুর পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রোববার প্রথম দিনেই ৩৬টি কুকুর আটক করা হয়। বিকেল চারটার দিকে সেন্ট মার্টিন জেটিঘাট এলাকায় কুকুর পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী ও নতুন যোগদান করা ইউএনও কায়সার খসরু। উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র শীল, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ, সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রতিবছর লাখো পর্যটক সেন্ট মার্টিন বেড়াতে আসেন। দ্বীপে আনুমানিক চার হাজার বেওয়ারিশ কুকুর আছে, যা দ্বীপে পর্যটক বিচরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউকে একা পেলে কুকুরগুলো তাঁকে আক্রমণের চেষ্টা চালায়। পাশাপাশি কুকুরগুলো সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজননের হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ বলেন, সেন্ট মার্টিন পর্যটন নগরী হওয়ায় সব বেওয়ারিশ কুকুর আটক করে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ছেড়ে দেওয়া হবে। এ কার্যক্রম আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। তিনি বলেন, প্রচুরসংখ্যক কুকুর একসঙ্গে কোনো একটি এলাকায় ছেড়ে দিলে সেখানে খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। স্থানান্তরিত হওয়ার পরে যাতে খাবারের সংকট দেখা না দেয়, সে জন্য সেগুলোকে যেখানে মানুষের বসতি আছে, তেমন কোনো এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।
সেন্ট মার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিনে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মানুষের বসবাস। এর পাশাপাশি পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৫-১২ হাজার পর্যটক দ্বীপে বেড়াতে আসেন। দ্বীপে চার হাজারের বেশি বেওয়ারিশ কুকুর আছে। ফলে প্রতিনিয়ত পর্যটক ও সাধারণ মানুষ কুকুরের আতঙ্কে থাকেন। কুকুরের আক্রমণে অনেক পর্যটক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া সৈকতে ডিম ছাড়তে আসা মা কচ্ছপগুলোও কুকুরের আক্রমণে মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে কুকুরের আক্রমণে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাঁস, মুরগি, ছাগল ও মাছ খেয়ে ফেলছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই এ উদ্যোগকে দ্বীপের বাসিন্দারা স্বাগত জানিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা টিটু চন্দ্র শীল বলেন, কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ দেখা দেয়। কখনো কখনো জলাতঙ্ক রোগে মানুষ মারা যান। জলাতঙ্ক রোগের টিকা সচরাচর উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। তাই মানুষকে কুকুরের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে বেওয়ারিশ কুকুর পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা হয়েছে।
ইউএনও পারভেজ চৌধুরী বলেন,সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আশঙ্কাজনকভাবে বেওয়ারিশ কুকুর বেড়ে যাওয়ায় ভ্রমণে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। তা ছাড়া ডিম ছাড়তে আসা কচ্ছপগুলোও হুমকির মুখে পড়েছে। তাই কুকুরগুলোকে না মেরে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পারভেজ চৌধুরী আরও বলেন, এ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিদিন যেসব কুকুর আটক করা হচ্ছে, সেগুলোকে ট্রলারে করে টেকনাফে নেওয়ার পরে সাবরাং, বাহারছড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বাসন করা হবে। আজ প্রথম দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৬টি কুকুর আটক করা হয়েছে।কুকুরগুলো যাতে অভুক্ত না থাকে, সে জন্য তাদের খাবার দিয়ে রাখা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার সকালে টেকনাফে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এর আগে ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে ‘কুকুর নিধন’ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে কুকুর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কুকুরকে টিকার আওতায় আনার কাজ শুরু করা হয়।


আরো খবর: