মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মো: রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ও মামলার মূল কাগজপত্রের নথি হাইকোর্টে পৌঁছানো হয়েছে। মঙ্গলবার ৮ ফেব্রুয়ারী ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে লালকাপড় দিয়ে মোড়ানো রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ও মামলার মূল নথি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিশেষ বাহক দায়রা সহকারী মো: আরিফুল ইসলাম মারফত পাঠানো হয়। একইদিন বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছানো হয়।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আব্বাস উদ্দিন সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৫ এর মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ও মামলার মূল নথি সড়কপথে মঙ্গলবার প্রেরণ করা হয় বলে জানান এস. এম আব্বাস উদ্দিন।
পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ১ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৬ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁর আদালতে প্রকাশ করেন।গত ৩১ জানুয়ারি একই আদালত দুইজনের মৃত্যুদন্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানিয়েছেন-পুরো রায়টি লেখা হয়েছে বাংলায়। আদালতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের তিন কর্ম দিবসের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানো হলো।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীর আইনজীবীরা গত ৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় আদালত থেকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি থেকে মামলার-সার্টিফাইড-কপি সংগ্রহ করেছেন বলে জানান প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আব্বাস উদ্দিন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামীর আইনজীবীরা বলেন, তাঁরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই ন্যায়বিচার পেতে তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
প্রধান দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় প্রত্যাশাপূরণ হয়েছে উল্লেখ করে নিহত সিনহার বোন ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, সাতজনকে একেবারে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। সেখানে আমার কাছে মনে হয়েছে, সেটা তো সম্ভব না। দায়বদ্ধতা তো কেউ এড়াতে পারে না, সে ক্ষেত্রে হয়তো তাদের কিছু সাজা হলেও হতে পারতো। তখন প্রত্যাশাটা আরেকটু বেশি পূরণ হয়েছে বলা যেত। আর সন্তুষ্টির কথা যদি বলেন, সন্তুষ্ট সেদিনই হবো, যেদিন এটা কার্যকর হবে। আদালত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রায় দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যাশা অনেকখানি পূরণ হয়েছে, সন্তুষ্টির জায়গাটা সেদিন বলব যেদিন এটা কার্যকর হবে। খালাসপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের চিন্তা করছেন বলে শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস জানান।
এ মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত হওয়া লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
গত ৫ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রদীপ কুমার দাশ ও মো. লিয়াকত আলীকে বিশেষ ব্যবস্থায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেমড সেলে রাখা হয়েছে। তারা সেখানে কয়েদির পোশাকে থাকছেন সারাক্ষণ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লিয়াকত আলীর বাড়ি পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হুলাইন গ্রামে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। ওই গ্রামের মৃত মো. সাহাব মিয়ার ছেলে লিয়াকত ২০১০ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে ডিবি, পরে সোয়াত ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটে কাজ করেন তিনি। তিন বছর আগে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান এবং টেকনাফ থানায় যোগদান করেন। লিয়াকত চন্দনাইশ উপজেলায় বিয়ে করেন। ওই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর বোয়ালখালীতে আরেকটি বিয়ে করেন। ওই ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে।
১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান। বাড়ি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর কঞ্জুরী গ্রামে। বাবা হরেন্দ্র লাল দাশ ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নিরাপত্তা প্রহরী।