আর একদিন পরেই অনুষ্টিত হতে বহুল আলোচিত কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচন। ইতি মধ্যে জেলা ব্যাপী ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ানো নির্বাচনকে সুষ্টভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ট নির্বাচন করতে ব্যাপক হারে পুলিশ র্যাাব ম্যাজিস্ট্রেট সহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন অফিসার।
এদিকে এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ইতিমধ্যে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রচারণা অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, ব্যাপক হারে টাকার ব্যবহার, এমনটি অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একেঅপরের বিরুদ্ধে তাই সবার চোখ এখন ১৭ অক্টোবরের জেলা পরিষদ নির্বাচনে। কি হচ্ছে কে হাসবে শেষ হাসি সেটা দেখার অপেক্ষায় পুরু কক্সবাজারের মানুষ।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাহাদাত হোসাইন বলেছেন, ১৭ অক্টোবর বহুল প্রত্যাশিত কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সুষ্টভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রশাসনিক এবং আইন শৃংখলা উভয় দিকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার ভোট গ্রহণ করা হবে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে, ঈদগাও উপজেলার ভোট গ্রহণ করা হবে ঈদগাও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে, কুতুবদিয়া উপজেলার ভোট গ্রহণ করা হবে কুতুবদিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এছাড়া বাকি ৫ উপজেলার ভোটর গ্রহণ করা হবে স্ব স্ব উপজেলা পরিষদ হল রুমে। ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোট দিতে পারেন সে জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ, র্যা ব, ম্যাজিস্ট্রেট সহ উর্ধতন সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন।
এদিকে সবার চোখ এখন জেলা পরিষদ নির্বাচনে। আসলে কি হচ্ছে ভোটের দিন। কোন অনাকাংখিত ঘটনাকি পুরু কক্সবাজারের রাজনৈতিকে ভিন্ন ধারায় নিয়ে যাচ্ছে নাকি একটি সুষ্ট নির্বাচনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে প্রকৃত গণতন্ত্র সেটা দেখার অপেক্ষায় ভোটার সহ পুরু কক্সবাজারের সর্বস্থরের মানুষ। এমন প্রত্যায় ব্যক্ত করে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন, ১৭ অক্টোবরের জেলা পরিষদের নির্বাচনে আসলে কি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য মানুষ উন্মোখ হয়ে আছে। কারণ এখানে সত্যিকার অর্থে দুই হেভীওয়েট প্রাথী মাঠে আছে।
ইতিমধ্যে মাঠে অনেক কথা চলছে, তবে আমরা চাইবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মান এবং মর্যাদা যেন নষ্ট না হয়। এমন কোন কাজ কেউ করবে না যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। আমরা সবাই সহনশীল হবো। তাছাড়া ইতি মধ্যে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও কক্সবাজার এসে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী শামসুল আলম মন্ডল বলেন, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সব কিছু অস্তির এবং অন্ধকার হয়ে আসছে। যেহেতু আমি নিজেও প্রার্থী তবে চেয়ারম্যানের ভোট বিষয়ে আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে অতিরিক্ত কালো টাকার ব্যবহার হচ্ছে যা অতীতে কোন সময় হয়নি। এছাড়া অনেক ভোটার আতংকের মধ্যে আছে তাদের হুমকি ধমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তারা।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কর্মী। দল থেকে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আমরা নিরলস ভাবে উনার জন্য কাজ করছি। তবে আমাদের চকরিয়া পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের সময় দেশের বাইরে। তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন সেটা নিয়ে ভোটার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
এদিকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, ভারত থেকে এমপি জাফর বেশির ভাগ ভোটারকে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে যার যথেস্ট প্রমাণ আছে। যদি চকরিয়ায় শেখ হাসিনার প্রার্থীর ভোটে নেতিবাচক কিছু হয় তাহলে তার জন্য অবশ্যই এমপি জাফর দায়ী থাকবেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৪৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তৎমধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন মোটর সাইকেল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার পেয়েছেন তালগাছ, শাহীনুল হক মার্শাল পেয়েছেন আনারস এবং মঙ্গল পার্টি নেতা জগদিশ বড়ুয়া প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
সংরক্ষিত সদস্য পদে ১ নং ওর্য়াড থেকে জেলা পরিষদ সদস্য উখিয়ার হলদিয়া পালং আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ জাহান কাজল (দোয়াত কলম), তছলিমা আক্তার রুমানা (টেবিলঘড়ি), তাছলিমা আক্তার (ফুটবল)। ২নং ওর্য়াড থেকে মশরফা জান্নাত-বই, চম্পা উদ্দিন-টেবিল ঘড়ি, সালেহা আক্তার আখি-ফুটবল, হুমাইরা বেগম-হরিণ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ৩নং ওয়ার্ড থেকে আসমা উল হুসনা- টেবিল ঘড়ি, তানিয়া আফরিন-দোয়াত কলম ,রেহেনা খানম-ফুটবল এবং হুমাইরা বেগম- বই প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
সাধারণ সদস্য পদে ১ নং ওয়ার্ড থেকে জাফর আলম-তালা, মোঃ শফিক মিয়া-টিউবওয়েল। ২নং ওর্য়াড থেকে আবুল মনসুর চৌধুরী-টিউবওয়েল, হুমায়ুন কবির চৌধুরী-তালা। ৩নং ওয়ার্ড থেকে মাহমুদুল করিম মাদু-হাতি, তাহমিনা নুসরাত জাহান লুনা-তালা, মোঃ রুহুল আমিন-অটোরিক্সা। ৪নং ওয়ার্ড থেকে ফরিদুল আলম- হাতি, শামসুল আলম মন্ডল-তালা, মোস্তাক আহমদ-অটোরিক্সা, নুরুল আবছার-ঘুড়ি, মোঃ মনজুরুল মুর্শেদ কাদের বৈদ্যুতিক পাখা, মোঃ আবদুল মজিদ-টিউবওয়েল। ৫নং ওয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৬ নং ওয়ার্ড থেকে সোলতান আহমেদ-ঘুড়ি, মুহাম্মদ ফয়সাল- হাতি,মোঃ আবু তৈয়ব-টিউবওয়েল, মোঃ জাহাঙ্গির আলম-তালা, এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া-বৈদ্যুতিক পাখা। ৭নং ওয়ার্ডে মোঃ আবদুল হামিদ-ক্রিকেট ব্যাট, মোঃ জয়নাল আবেদীন-হাতি,মোলতান মোহাম্মদ রিপন-ঢোল,নুরুল আবছার-বৈদ্যুতিক পাখা, সেলিনা আক্তার-উটপাখি, মোহাম্মদ আজমগীর-টিউবওয়েল। ৮ নং ওয়ার্ডে এম. আজিজুর রহমান-তালা, শহীদুল ইসলাম মুন্না-হাতি, মোঃ সাইফুল কাদির-টিউবওয়েল। ৯নং ওয়ার্ডে কফিল উদ্দিন-তালা,আবু জাফর ছিদ্দিকী-হাতি, ছরওয়ার আলম সিকদার-ঘুড়ি এবং নুরুল ইসলাম-টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। উল্লেখ্য, ৯টি উপজেলার ৭১ ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯৯৪ জন।