ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার যে দক্ষতা রয়েছে তা বিএনপির কোনো নেতার নাই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
সভায় সভাপত্বি করেন- বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, একাধিক দুর্লভ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী আমাদের নেত্রী তার অন্যতম হলো, পিতার প্রতি বিরল ভালোবাসার উদাহরণ স্থাপন করা। এই রকম একজন মানবিক এবং সংবেদনশীল ব্যক্তি, যে সারা জীবন দেখেছে তার পিতাকে এ দেশের মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করতে, যে শিশু বয়সে নিজে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সেই মানুষটির ১৫ আগস্টের শোক বহন করতে হয় আজীবন ধরে। বঙ্গবন্ধু পরিবার রক্ত দিয়ে ১৫ আগস্টে যে মূল্য দিয়েছে তাতে আজীবন জাতি বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি ঋণী থাকবে। ১৫ আগস্টের অভিজ্ঞতা থেকে ফিরে এসে এ দেশের মানুষের প্রতি আমাদের নেত্রীর যেই ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তা তার উদারতা আর মহত্বের প্রমাণ বহন করে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জন্ম না নিলে আমরা গণতন্ত্র পেতাম না, সামাজিক ন্যায়বিচার পেতাম না, অর্থনৈতিক মুক্তি পেতাম না, ভোট ও ভাতের অধিকার পেতাম না, একটা মর্যাদাশীল দেশও পেতাম না এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না। আমরা এখন গর্ব করে বলি, এ দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন টাকা বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন কেবল কথার ফুলঝুরি না, বাস্তবতা। তার দক্ষতার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। অসাম্প্রদায়িকতা, উদার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদৃষ্টি তাকে করে তুলেছে এক আধুনিক এবং অগ্রসর রাষ্ট্রনায়ক।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার যেই রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা রয়েছে সেটা নিশ্চয়ই বিএনপির কোনো নেতাদের নাই। বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সংকটের গভীরতার সঙ্গে বিএনপি কোনো নেতারা ওয়াকিবহাল না। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তিত করবে এবং এই সকল কাজে সুফল একমাত্র শেখ হাসিনার সাহসী দক্ষ নেতৃত্বই সম্পন্ন করতে পারবে। অতএব, বিএনপি নেতাদের বলব, ক্ষমতায় যাওয়ার লিপ্সা পরিহার করেন এবং যোগ্যতা বাড়ান। প্রতিযোগিতায় আসেন। ভোটে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। যোগ্যতার মাপকাঠিতে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর দক্ষতা অর্জন করুন। নিশ্চয়ই অনুকম্পা করে, বা সমঝোতা করে আপনাদের গদিতে বসানো হবে না। বিদেশিদের কাছে নালিশের রাজনীতি করেও কোনো লাভ হবে না, বরঞ্চ নিজেদের যোগ্যতা বাড়ান।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এমন এক নেত্রীকে অনুসরণ করি যিনি আজীবন ধরে এ দেশের মানুষের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা করে যাচ্ছেন। আমাদের প্রজন্মকে তার কাছ থেকে ত্যাগের দীক্ষা নিতে হবে। আমি আশা করি এ দেশের যুবসমাজ জননেত্রীর দেখানো পথ অনুসরণ করে জনগণের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে সর্বদা সোচ্চার থাকবে এবং প্রয়োজনে প্রতিবাদী থাকবে। একই সাথে সমসাময়িক ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা নিজেদের দক্ষ যুবশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে মনোনিবেশ করব। একটা রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন হিসাবে একটা মর্যাদাশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন যুবলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মীদের প্রাণের স্পন্দনে পরিণত হয়েছে। সেই স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে আজকের যুবলীগ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার সংগ্রামে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে অবতীর্ণ হবে।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা কাদের ভয় দেখায়। ওদের কী কোনো আক্কেল নাই। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করার জন্য যুবলীগই যথেষ্ঠ। যুবলীগকে দেখলে ভয়ে শয়তানও পালিয়ে যায়, আবার আপনাদের মতো শয়তানরা এক দফার ভয় দেখান।
তিনি বলেন, ’৭৫-এর খুনি ও ২১ আগস্টের খুনিরা সব এক। জিয়াউর রহমান ২১ বার সেনাবাহিনীতে ক্যু করেছেন। এই দলটি খুনির দল। বঙ্গবন্ধু ও জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জিয়াউর রহমান। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র হলো বিএনপি-জামায়াতের মূল লক্ষ্য। তারা জানে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা ভোট ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। দেশকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে আবারও হক্ষমতায় আসতে হবে।
এ সময় আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। কীভাবে মানুষের অধিকার আদায় করতে হয় সেই দীক্ষা শেখ হাসিনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার প্রতিষ্ঠিত অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা ধ্বংস করতে চায়। ’৭৫-এর ঘাতকচক্র ও ২০০৪ সালের খুনিরা এক ও অভিন্ন। শেখ হাসিনা আমাদের প্রেরণার উৎস, আমাদের বাতিঘর। সেই ঘাতক চক্র আবারও ষড়যন্ত্র করছে দেশের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, বাংলাদেশকে পাকিস্তানি করার ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে আমরা দেশ ছেড়ে দিতে পারি না। দেশকে যারা ধ্বংস করতে চায় তাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা, শেখ হাসিনার সৈনিকরা বসতে পারে না। এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাদের রাজপথে প্রতিহত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, বাংলাদেশের মর্যাদাকে যিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত করেছেন, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানায়। তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, সামনে যে নির্বাচন, এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক কাজ ও তথ্য বহুল চিত্র যদি তুলে ধরতে পারেন তাহলে মানুষের মনোজগতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসা যাবে। স্লোগানের পাশাপাশি বিপ্লবী পরিবর্তনের পাশাপাশি, তথ্য বহুল বক্তব্যই হবে আমাদের আগামী দিনের হাতিয়ার।
সঞ্চালকের বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আমরা স্মরণ করে দিতে চাই জাতিকে, স্মরণ করে দিতে চাই যুবসমাজকে, স্মরণ করে দিতে চাই বিদেশি শক্তি ও প্রভুদের যারা বাংলাদেশকে নিয়ে নাড়া-চাড়া করছেন। বাংলাদেশকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কথা বলে আপনারা জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে যারা ভূলুণ্ঠিত করল, পদদলিত করল সেই বিএনপি-জামায়াতকে আপনারা বাংলার মানুষের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। আপনাদের ও জাতির উদ্দেশে বলেত চাই- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দেশে প্রথম গণতন্ত্রকে হত্যা ও মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করেছে জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ না ভোটের মাধ্যমে জাতির ভোটের অধিকার কেরে নিয়েছিল জিয়াউর রহমান। আপনাদের চোখ সে দিকে পড়ে না। জিয়াউর রহমান কার্ফু জারি করে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাকে রাতে আঁধারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। জামায়াতকে রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্যই জিয়াউর রহমান বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা বিএনপি-জামায়াতকে আর জনগণের ওপর অত্যাচার করার সুযোগ দিতে পারি না। পেট্রলবোমা মারার সুযোগ দিতে পারি না। কারণ দেশ এগিয়ে গেছে, এই দেশের অগ্রগতিকে দাবিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র যুবসমাজ মানতে পারে না।
আর ও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. খালেদ শওকত আলী, মো. এনামুল হক খান, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, মো. জসিম মাতুব্বর, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল, মো. রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, মো. জহির উদ্দিন খসরু, মশিউর রহমান চপল, প্রফেসর ড. মো. রেজাউল কবির, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম মিল্টন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক কাজী সারোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, ধর্ম সম্পাদক মাওলানা মো. খলিলুর রহমান সরদার, উপদপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপতথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপস্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. মাহফুজার রহমান উজ্জ্বল, উপক্রীড়া সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান, উপমুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মো. গোলাম কিবরিয়া শামীম, উপধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতারা।