পিয়ং ইয়াং, ১৪ এপ্রিল – নতুন একটি সলিড-ফুয়েল আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ংয়ের দাবি, এটি তাদের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ ক্ষেপণাস্ত্র। দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়াতে এই পরীক্ষাকে ‘অলৌকিক সাফল্য’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
তবে উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য জাপানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্রে মিহি পাউডারের মতো কঠিন জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। এটি তরল জ্বালানি দিয়ে চালিত ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে দ্রুত নিক্ষেপ করা যায়। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে আটকানোও কঠিন।
তবে দক্ষিণ কোরিয়া মনে করে, শতভাগ সফল সলিড-ফুয়েল আইসিবিএম তৈরি করতে উত্তর কোরিয়ার আরও সময় লাগবে।
সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র কী?
উত্তর কোরিয়া এর আগে যেসব আন্তঃমহাদেশীয় সলিড ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএমের পরীক্ষা চালিয়েছে, সেগুলোর পাল্লা ছিল অল্প দূরত্বের। এই প্রথমবার তারা দূরপাল্লার সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালো।
তবে উত্তর কোরিয়া আগে বেশ কিছু আন্তঃমহাদেশীয় অর্থাৎ এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে আঘাত করতে পারে এমন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, যেগুলোর জ্বালানি ছিল তরল।
এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঠিক আগে তাতে তরল জ্বালানি নিতে হয়। এর জন্য বেশ সময়ের প্রয়োজন। তবে সলিড-ফুয়েল আইসিবিএম আগে থেকেই জ্বালানিসহ প্রস্তুত করা থাকে বলে সেগুলো যেকোনো সময় খুব দ্রুত নিক্ষেপ করা যায়।
উত্তর কোরিয়ার সবশেষ এই পরীক্ষাকে বিশেষজ্ঞরা পিয়ংইয়াংয়ের অস্ত্র কর্মসূচির বড় অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করছেন। তারা বলছেন, খুব বেশি সময় ব্যয় না করেই উত্তর কোরিয়া এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও আঘাত হানতে পারবে।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার বলেছে, এই প্রযুক্তি নতুন কিছু নয় এবং উত্তর কোরিয়া বৃহস্পতিবার যে পরীক্ষাটি চালিয়েছে, তা একটি সফল সলিড-ফুয়েল আইসিবিএম প্রস্তুতের ‘মাঝামাঝি ধাপ’।
কিম জং উনের তদারকি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, তার কন্যা, স্ত্রী বোনকে সঙ্গে নিয়ে এই আইসিবিএম পরীক্ষার তদারকি করেছেন। কিম বলেছেন, এই অস্ত্রের কারণে উত্তর কোরিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ‘চরম ভীতি ও উদ্বেগের মধ্যে থাকবে’। তিনি জানিয়েছেন, হোয়াসং-১৮ নামে যে ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা চালানো হয়েছে, সেটি পিয়ংইয়ংয়ের আগ্রাসী সামরিক কৌশলেরই অংশ।
এই পরীক্ষাটির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ বলেছে, এর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ‘উচ্চশক্তির সলিড-প্রপেলেন্টের বিভিন্ন মোটর কত নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা’। এছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রটির সূক্ষ্ম কিছু প্রযুক্তি এবং পুরো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
পরীক্ষার নিন্দা
উত্তর কোরিয়ার এই পরীক্ষার ফলে জাপানের উত্তরাঞ্চলে কিছুটা বিভ্রান্তি বা আতঙ্ক তৈরি হয়। সেখানে লোকজনকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও ৩০ মিনিট পরেই সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়।
জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে স্কুল শুরু হতে বিলম্ব হয়। কিছু ট্রেন চলাচলও বাতিল করা হয়।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র এই পরীক্ষার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৪ এপ্রিল ২০২৩