নিজদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের এখনই ফেরত পাঠানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
শনিবার (২৮ মে) ভারতের আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দক্ষিণ এশিয়া, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ১২টি দেশের প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত ও মন্ত্রীদের নিয়ে শুরু হওয়া ‘নদী’ (ন্যাচারাল অ্যালাইজ ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারডিপেন্ডেনস) নামের এক সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন এ কে আব্দুল মোমেন।
আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তার স্বার্থে এমনটি করা উচিত বলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করসহ অন্যদের সম্মুখেই একথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আব্দুল মোমেন বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় সুরক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের বাসস্থান ও খাদ্য দিয়ে চলেছে। তবে এটা একটা ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা। বরাবরের জন্য এমন চলতে পারে না। তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। তারা যেখানে রয়েছেন বিগত দিনগুলোতে সেখানকার কিছু অঞ্চলে অপরাধ ও উগ্রবাদ বাড়ছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাব্যবস্থাকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
মিয়ানমারের নাগরিকদের এখনই তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রয়োজন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা নিজেরাও নিজেদের দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন। এ লক্ষ্যে এ অঞ্চলের সব দেশের সহায়তা প্রয়োজন।
গুয়াহাটিতে শুরু হওয়া সম্মেলনের মূল বিষয় পানি ও নদী নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্থলপথের উন্নয়নের আগেই জলপথে সভ্যতার বিকাশ হয়েছে এবং এক দেশ আরেক দেশের বন্ধুরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। জলপথের এ বিকাশ ভবিষ্যতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ স্থাপনে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
জলপথে এই অঞ্চলকে একে অন্যের সাথে জোড়া দেয়ার ক্ষেত্রে নদীতে পলি জমার সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সমস্যা সবার এবং এর সমাধানে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কম খরচে এটা করা যায় না। এই সমস্যা সমাধানে এই অঞ্চলের সব দেশের সহায়তা জরুরি।
সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে উত্তর-পূর্ব ভারতকে কেন্দ্রে রেখে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে নরেন্দ্র মোদি সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়াও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতকে নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ও এর সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে জোড়ার প্রশ্নকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছে মোদি সরকার।
তিনি আরও বলেন, জলপথ বাদেও সড়ক নির্মাণ ও সড়কপথে যোগাযোগের অবকাঠামো উন্নয়নেও ভারত সচেষ্ট এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ফেরতযোগ্য ঋণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। বাংলাদেশের নদী বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাতসহ এ অঞ্চলের একাধিক নদী বিশেষজ্ঞও সম্মেলনে বক্তব্য দিবেন। এছাড়াও সম্মেলনে আরও অংশ নেবেন জাপান, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশের নদী বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরাও। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ।
সম্মেলনের আয়োজক সংস্থা এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন স্তরে নদীকেন্দ্রিক সহযোগিতা গড়ে তোলাই এ সম্মেলনের লক্ষ্য।