শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ভারতে কারাবন্দি মহেশখালীর ২৭ জেলে পরিবারে চলছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক::

ভারতে কারাবন্দি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ২৭ জেলে পরিবারে চলছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। গত ১১ ফেব্রæয়ারি উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গার সাজ্জাদুল ইসলামের মালিকানাধীন ফিশিং ট্রলার এফবি শাহ আমানত ২৭ জন মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে যায়।

১৩ ফেব্রæয়ারি ভারতের জলসীমায় অনুপ্রবেশের অপরাধে তারা সে দেশের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হন। ১৪ ফেব্রæয়ারি কলিকাতার কাকদ্বীপ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ১৪ দিনের সাজা প্রদান করে কারাগারে পাঠান। বর্তমানে তারা কলিকাতার ছব্বিশ পরগনা জেলার কার্তিক মহুকুমা কারাগারে রয়েছে।

ভারতে কারাবন্দি থাকা কিশোর মুহাজিদের মা ময়েনা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী আবুল হোসেনের দেহে আট মাস আগে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। পাঁচ মেয়ের মধ্যে দু’জন অবিবাহিত। ২ ভাই রবিউল হাসান জিদান ও মোহাম্মদ মুজাহিদের উপার্জনে সংসার চলতো, চলতো পিতার চিকিৎসা। একমাস পার হয়েছে ছেলেটা এখনো ফেরেনি। কোনো খোঁজও পাচ্ছি না।

মুজাহিদের বড় ভাই রবিউল হাসান বলেন, মুজাহিদের মতো বড় বোন বিপাশা আক্তারের স্বামী আবদুল করিমও কারাবন্দি। শুধু এ পরিবার নয়, মহেশখালীর কুতুবজোম ঘটিভাঙ্গা এলাকার ২৭ জন জেলে পরিবারে চিত্র একই। এসব পরিবারগুলোতে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
কারাবন্দি একই এলাকার জেলে হামিদ হোসেনের (৩০) মা ছকিনা বেগম বলেন, আটকের প্রায় একমাস গত হলেও আমার ছেলের খোঁজ পাচ্ছি না। এমনিতে অভাব-অনটন, তার ওপর ক্ষুদ্র ঋণে আটকে আছি।

আরেক জেলে আবদুল গফুরের মা এলমুন নাহার (৫০) বলেন, আমার সম্বল কিছু নেই, ছেলেটাই সম্পদ। ১৫ দিন সময় চেয়েছিল, তারপরও ফেরত আসেনি।
সোনাদিয়ার জেলে কবির হোসেনের স্ত্রী তসলিমা বেগম বলেন, সপ্তাহে ১৬০০ ও মাসিক ৬ হাজার টাকা ঋণ শোধ করতে হয়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার উপকরণ কিনে দিতে না পারায় স্কুলে পাঠাতে পারছি না। খুব কষ্ট আছি।

কারাবন্দি জেলেরা হলেন, পেঠান আলী (৩৭), খোরশেদ আলম (৪৪), গিয়াস উদ্দিন (৪০), হেলাল উদ্দিন (৪২), সফিউল আলম (৩৪), ফরিদ আলম (৪৫), রবিউল আলম (৩৫), মো. শওকত উদ্দিন (৩০), গোলাম সোলতান প্রকাশ মোস্তাক (৪৩), আব্দু শুক্কুর প্রকাশ দানু (৩৮), মো. ইব্রাহিম (২৮), মো. রুবেল (২৬), আব্দুল মজিদ (২৫), নুরুল কবির (৩৫), আব্দুল মজিদ (২৭), কবির হোসেন (৩৩), আব্দুল গফুর (৩২), আব্দু রহমান (৫০), আব্দুল করিম (২৭), রবি আলম (৩১), হামিদ হোসেন (৩৫), শাহেদ মিয়া (১৮), জিহাদ প্রকাশ জাহেদ (২১), আব্দু ছফুর (২৩), মোহাম্মদ মুহাজিদ (১৮), শফি আলম (৩২) ও মোহাম্মদ কালু (৩৫)।

এদিকে জেলেদের ছাড়িয়ে আনতে গত ১০ দিন ধরে ভারতে অবস্থান করছেন ট্রলার মালিক সাজ্জাদুল ইসলাম। তিনি জানান, সোমবার ১৭ মার্চ তাদের আদালতে তোলা হয়েছে। জেলেদের মুক্তির জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেছি। তবে সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মামলার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন বিচারক।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুপারিশপত্র ভারতীয় হাই-কমিশন বরাবরে পাঠানো হয়েছে। তাদের সর্বাত্মক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। উৎকণ্ঠার কিছু নেই।

মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, জেলেদের ছাড়িয়ে আনতে দু’দেশের মধ্যে যে আইনগত জটিলতাগুলো আছে সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছেন। ইতিমধ্যে জেলেদের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার দূতাবাসের কর্মকর্তারা জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। আশা করছি, দ্রæত সময়ে তারা দেশে ফিরে আসবে।


আরো খবর: