বেইজিং, ১৯ এপ্রিল – চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) একটি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু এ ঘটনার বিষয়ে খুব বেশি তথ্য জানায়নি কর্তৃপক্ষ। এমনকি আগুন লাগার পরে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিষয়টি পুরোপুরি গোপন রাখা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমগুলোতে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে জানা যায়, ফেংতাই জেলার চাংফেং হাসপাতালে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় প্রাণ বাঁচাতে কয়েকজনকে জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসতে এবং শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) ইউনিটগুলো আকড়ে ধরে থাকতে দেখা যায়।
অথচ এ ঘটনার বিষয়ে পুরোপুরি নীরব ছিল চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া। এমনকি, ইন্টারনেটে অগ্নিকাণ্ডের ছবি-ভিডিও শেয়ার করাতেও কড়াকড়ি আরোপ করে কর্তৃপক্ষ।
বেইজিংয়ের অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, দুপুরে আগুন লাগলেও মঙ্গলবার রাত হওয়ার আগপর্যন্ত তারা ঘুণাক্ষরেও আগুনে প্রাণহানির কথা জানতে পারেননি।
অবশেষে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করে চীনা কর্তৃপক্ষ। তবে সেই সংবাদ সম্মেলনও ছিল মাত্র ২০ মিনিট স্থায়ী।
বেইজিংয়ের দমকল বিভাগের কর্মকর্তা ঝাও ইয়াং জানিয়েছেন, চাংফেং হাসপাতালের একটি ভবনে অভ্যন্তরীণ সংস্কার কাজের স্ফুলিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এটি দাহ্য রঙের সংস্পর্শে আসলে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে।
বেইজিং পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর কর্মকর্তা সান হাইতাও বলেছেন, এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার সন্দেহে হাসপাতালের পরিচালক, নির্মাণ শ্রমিকসহ মোট ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহদের মধ্যে ২৬ জন ভর্তি রোগী ছিলেন, যাদের গড় বয়স ৭১ বছর। সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি ছিলেন ৮৮ বছরের। এছাড়া একজন নার্স, একজন পরিচর্যাকর্মী এবং পরিবারের এক সদস্যও আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।
আগুনের পর ৭১ জন রোগীসহ মোট ১৪২ জনকে নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। বেইজিং মিউনিসিপ্যাল হেথ কমিশনের ডেপুটি ডিরেক্টর লি অ্যাং বলেছেন, বুধবার পর্যন্ত ৩৯ জন রোগী হাসপাতালটিতে রয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
গোপন রাখার চেষ্টা
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পশ্চিম বেইজিংয়ের একটি ব্যস্ত এলাকায় আগুন লাগে। কিন্তু প্রায় আট ঘণ্টা পর্যন্ত চীনা মিডিয়ায় বিষয়টি গোপন রাখা হয়।
রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে, অর্থাৎ দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ও উদ্ধার অভিযান শেষ করার পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে স্থানীয় বেইজিং ডেইলি পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি নামমাত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এমনকি, অতীতে এ ধরনের ঘটনার খবর যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়তো, এবার সেটিও অনেকটাই নীরব ছিল।
উইচ্যাটে একজন বলেছেন, প্রায়ই বলা হয়, যে যুগে প্রত্যেকের কাছে মাইক্রোফোন থাকে, সেই যুগে খবর ছড়ানো রোধ করা কঠিন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এটি অতটাও কঠিন নয়। যদিও ২১ জন (পরে ২৯ জন হয়েছে) মারা গেছে, তবু যতক্ষণ পর্যন্ত (কর্তৃপক্ষ) এটি ঘোষণা না করবে, ততক্ষণ মনে হবে সমাজে যেন কিছুই ঘটেনি।
চাংফেং হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পরিবারের সদস্যরাও জানিয়েছেন, ট্র্যাজেডির পরে তাদের এ বিষয়ে জানানো হয়নি। এক রোগীর আত্মীয় বলেন, সাত-আট ঘণ্টা কেটে গেলেও আমি একটি ফোন কল পাইনি।
এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হতাহতদের তালিকা দিতেও অপরাগতা প্রকাশ করে।
যদিও কিছু চীনা মিডিয়া আউটলেট পরে অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু তাদের দীর্ঘ নীরবতায় হতাশ চীনের উদারপন্থি সাংবাদিকরা।
বেইজিংয়ের একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক গণমাধ্যমে সেন্সরশিপের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে উইচ্যাটে লিখেছেন, ২৯ জনের মৃত্যু নয়, সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় আট ঘণ্টার নীরবতা।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৯ এপ্রিল ২০২৩