রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

প্রতিবন্ধীদের মুখে হাসি ফুটাচ্ছে নোঙর!

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক::

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন সাধনের জন্য কক্সবাজারের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নোঙর নিরলসভাবে কাজ করছে।

অস্ট্রেলিয়ান এইডের অর্থায়নে ব্রাকের সহযোগিতায় হলদিয়াপালং ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরির লক্ষে কাজ করছে কক্সবাজারের এই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি।

তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন ও মানসিক বিকাশ তথা সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী দিকনির্দেশনায় হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৩৩ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে জীবন ও জীবিকার জন্য ছাগল পালনের কাজ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যা শারীরিকভাবে অক্ষম, পক্ষঘাতগ্রস্ত, পঙ্গু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে নোঙর হতে ছাগল পেয়ে মহাখুশি প্রতিবন্ধি সাদিয়া মুনমুন। অথচ অভাবের সংসার এবং নানান বৈষম্য, দারিদ্রতা নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। নোঙরকে পাশে পেয়ে নিজের জড়তা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চান।

অন্যদিকে, আরিফুল ইসলাম শারিরীক প্রতিবন্ধী। তিনি হাটতে সমস্যা হলেও নোঙর কর্তৃক ছাগল ও অন্যান্য উপকরণ পেয়ে লাভবান হয়েছেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে তিনিও অবদান রাখছেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দুলাল বড়ুয়া আরেকজন প্রতিবন্ধী। নোঙর এর মাঠ জরিপে নাম উঠে আসে তার। পেয়েছেন তার পছন্দনুযায়ী ছাগল পালন।

তার পরিবার থেকে জানানো হয়, নোঙরের সহযোগিতায় পাওয়া ছাগল পালন করছি। ছাগল বাচ্চা দিবে খুব দ্রুত। বাচ্চা হলে তা পরিচর্যা করে বড় করবো এবং ছাগল বিক্রি করে লাভের টাকাসহ পূণরায় আরও বেশী ছাগল কিনে খামার করবো।

এমনই লাইভলিহুড প্রকল্পের আওতায় সহায়তা পেয়েছেন আরও ৩৩ টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবার। যারা নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন। সফল হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

নোঙর এর নির্বাহী পরিচালক রাশেদ দিদারুল জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে নোঙর এর বিভিন্ন কার্যক্রম তাদের মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে। এ সংস্থা হলদিয়ায় প্রতিবন্ধীদের মাঝে এ আশাবাদ প্রতিষ্ঠা করছে যে তারা কোনমতেই সমাজের বোঝা নয়- বরং উপযুক্ত সুবিধা এবং সুযোগ পেলে তারা ও সবাইকে দেখিয়ে দিতে পারে তাদের সক্ষমতা এবং একইসাথে দেশকে পারে এগিয়ে নিতে। “নোঙর সংস্থা”র একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে শুধু প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন নয়, বরং তারা প্রতিবন্ধীদের অভিভাবকদের জীবনমান উন্নয়নে এবং একইসাথে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেও কাজ করছে। এটি একইসাথে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী কিন্তু খুবই কার্যকরী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

তিনি বলেন, সাধারণত যাঁরা শারীরিকভাবে একটু অক্ষম, তাঁদের নিয়ে আমরা তেমন একটা চিন্তা করি না। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো আমরা অনেক সময় খেয়াল করি না। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও সমাজে সবার মতো সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা স্বাভাবিক মানুষের মতো অথবা অনেক সময় স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি দক্ষ হয়ে থাকেন। তাঁদের যথাযথ সুযোগ তৈরি করে দিলে তাঁরা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারেন।

সেজন্য সবার আগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবন্ধীদের জন্য নেওয়া সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের ওপর আরোপিত বাঁধা, কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধ্যানধারণা দূরীকরণে আমরা সচেষ্ট। তাদের ক্ষমতায়নে সরকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের মেধা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উন্নয়নের মূলধারায় আনতে আমরা সচেষ্ট। আর তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান অত্যন্ত জরুরি। কারণ, একটি পরিবারে যখন একজন প্রতিবন্ধী জন্ম নেয়, তখন সেই পরিবার ধরেই নেয় যে সে পরিবারের জন্য একটি বোঝা। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের আর পরিবারের বোঝা হিসেবে বেঁচে থাকতে হবে না। তাদের মূলস্রোতধারায় আনতে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী বলে এই সমাজে কেউ নিজেকে আর অসহায় ভাবতে পারবে না। একজন অটিজম আক্রান্ত শিশুর মা-বাবা তার সন্তানের জন্য মুখ লুকাবে না। প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থান ঘটবে।’

‘বাংলাদেশ বর্তমানে গোটা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের সব ক্ষেত্রেই এখন সফলতা দৃশ্যমান। এই উন্নয়নের জোয়ারে দেশের এক শ্রেণির মানুষ অবহেলিত থাকবে, পেছনে পড়ে থাকবে, তা হতে পারে না। প্রতিবন্ধী মানুষের কর্মহীনতা দেশের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ জন্য আমরা হলদিয়াপালং ইউনিয়নের কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।


আরো খবর: