বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে পাহাড়ের অনেক পরিবারে। ঔষধি ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে মাশরুম এই অঞ্চলের মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চাহিদা থাকায় স্বল্প খরচে লাভজনক মাশরুম চাষে ঝুঁকছে পাহাড়ের নারীরাও।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্য মতে, জেলার সাতটি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে বান্দরবান সদর ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় মাশরুমের চাষ সবচেয়ে বেশি। জেলায় প্রায় ৬ শতাধিক নারী-পুরুষ হর্টিকালচার সেন্টার, গ্রীণহোম মাশরুম এগ্রো ফার্ম এবং উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে।
এখানে ৪ ধরণের মাশরুমের চাষ হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-স্ট্র মাশরুম, ইয়ার মাশরুম, অয়েস্টার মাশরুম এবং বাটন মাশরুম। এদিকে মাশরুম একটি ঔষধি ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ স্বাস্থ্য সম্মত খাবার। খাবার হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টেও খাবারের উপকরণের সাথে মাশরুমের ব্যবহার বাড়ছে ক্রমান্বয়ে। জেলায় দৈনিক ১শ কেজির বেশি মাশরুমের চাহিদা রয়েছে। তারমধ্যে শুধুমাত্র ২৫ কেজি মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে।
বান্দরবান এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় মাত্র ২৫% মাশরুম জেলায় উৎপাদিত হচ্ছে। বাকিটা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম জেলা থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আমার ফার্মে বর্তমানে ১৫ জন কর্মচারি জড়িত রয়েছে।
মাশরুম চাষ করে ইতিমধ্যে পাহাড়ে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ফিরেছে অনেক পরিবারে। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় তরুন-তরুনীরা ফার্মে কাজ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষে যুক্ত হচ্ছে। উৎপাদিত মাশরুম ছাড়াও চাষ সম্প্রসারণে স্থানীয়ভাবে মাশরুমের স্পন এবং সিলিন্ডার বিক্রি করছি।
স্থানীয় আরেকটি মাশরুম ফার্মের কর্ণধার আমির হোসেন টিপু বলেন, মাশরুম চাষ লাভজনক। স্থানীয়দের কর্মসংস্থান তৈরি করে মাশরুম ফার্ম থেকে উপার্জিত অর্থে আমি স্বাচ্ছন্দে চলতে পারছি। উৎপাদিত মাশরুম স্থানীয়দের চাহিদা মেটাচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৫শ টাকায়। শুকনো মাশরুম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২শ টাকায় কেজি। প্রতিটি মাশরুমের মাদার স্পন বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায় এবং মাশরুম সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে একশ টাকায়।
রোয়াংছড়ি উপজেলার বাসিন্দা কিকি ম্যা মারমা ও মেহ্লাও মারমা বলেন, এনজিও সংস্থার মাধ্যমে মাশরুম ফার্মে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে পরিবারের পাশে দাঁড়াবো। উপার্জিত অর্থে সামাজিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবো। এখানে কিভাবে মাশরুমের স্পন ও সিলিন্ডার তৈরি এবং মাশরুমের পরিচর্যা সবকিছুই শিখতে পারছি।
এবিষয়ে বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টার উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ ছিদ্দিকী বলেন, পাহাড়ের মানুষেরা এতদিন জুম’সহ ফলজ চাষেই অভ্যস্ত ছিলো। কিন্তু ইদানিং নতুন করে মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছে। চাহিদা এবং স্বল্প পুঁজিতে লাভজনক হওয়ায় বান্দরবান জেলায় মাশরুম চাষে ঝুঁকছে পাহাড়ের মানুষ।
হর্টিকালচার সেন্টার এবং বিভিন্ন মাশরুম খামার থেকেও স্পন প্যাকেট সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুমের চাষ শুরু করছে পাহাড়ের যুবক যুবতীরা। পাহাড়ের মানুষেরা আগে থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন। তাই তাদের খাদ্য তালিকায় মাশরুম বেশ জনপ্রিয় খাবার। মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।