রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি স্বজনদের

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

মিজবাউল হক ::

গাড়ি চাপায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যু কোনমতে মেনে নিতে পারছে না আত্মীয় স্বজনরা। এটাকে তারা দূর্ঘটনা মনে করছে না। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছে। তাদের অবস্থান সড়ক থেকে প্রায় ৫ ফুট দুরে ছিলো।
প্রথমে চাপা দেয়ার পর চালক পূনরায় তাদের চাপা দেয় বলে জানিয়েছেন পরিবার ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তি দাবী করেন স্বজনরা।
মৃত ডা. সুরেশ চন্দ্র সুশীলের মেয়ের জামাতা সাংবাদিক খগেশ চন্দ্র প্রতি খোকন জানান, দূর্ঘটনার দশদিন পূর্বে মারা যান তার শ্বশুর সুরেশ চন্দ্র সুশীল। তার শ্বশুরের মৃত্যুর পর থেকে ৭ ছেলে ও ২ মেয়ে বাড়িতে ছিলো। বাবার মৃত্যুর পর ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান গুলো পালন করছিলেন তারা। ঘটনার দিন ৮ ফেব্র‍ুয়ারি ভোর ৫টার দিকে ৭ ভাই ২ বোন গায়ে সাদা ধুতি পরে সারিবদ্ধভাবে হাটতে থাকে। বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে শ্বশানে যেতে মহাসড়কের দিকে যান। সড়কের প্রায় ৫ ফুট দুরে ৯ ভাই-বোন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পূজো দেন। ওইসময় তারা পূজোর ধ্যানে ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে পিয়াজ ও আলু ভর্তি কক্সবাজারগামী একটি পিকআপ ৯ ভাই-বোনের উপর দিয়ে চালিয়ে যায়। চালক গাড়িটি পাশের একটি গাছের সাথে ধাক্কা দেয়।
ওই সময় ঘটনাস্থলে এক ভাইয়ের মৃত্যু হলেও চালক পূণরায় গাড়িটি তাদের উপর চালিয়ে যান। সেখানে অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল মারা যান। ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে আরেক ভাই সরণ শীল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আহত হন-রক্তিম সুশীল, প্লাবন সুশীল ও বোন হীরা সুশীল।
স্বজনদের দাবী, গাড়িটি প্রথমে চালিয়ে গেলেও বড়ধরণের ক্ষতি হয়নি। চালক গাড়িটি কেন পূণরায় আহতদের উপর চালিয়ে গেলো? তা কেউ মেনে নিতে পারছে না। তাছাড়া ৯ ভাই-বোনের অবস্থা সড়কের প্রায় ৫ ফুট দুরে ছিলো। এটাকে নিছক দূঘর্টনা নয় হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন তারা।
এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের দাবীও জানান। রক্তিম সুশীল এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তিনি আইসিইউওতে রয়েছেন। প্লাবন সুশীল মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। তাদের বোন হীরা সুশীল মালুমঘাট খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার একটি পা ভেঙ্গে গেছে।
চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের হাসিনাপাড়ায় শুক্রবার মৃত ডা. সুরোজ চন্দ্র সুশীলের বাড়িতে ছিলো পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান।
নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুর চারদিন পর শ্রাদ্ধ দিতে হয়। সে হিসেবে শুক্রবার ধার্য্য ছিলো। এদিন সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। সেখানে পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তারা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করেন।
এসময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহতদের মা মৃণালীনি বালা সুশীল মানু। তার কান্নায় অন্যরা ধরে রাখতে পারেনি। শোকে কাতর আশপাশের লোকজনও। সারি সারি নিহতের ছবিতে পরিয়ে দেন কাচা ফুলের মালা। পুরোহিতরা ধর্মীয় কাজ সেরে নেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার দিকে বাড়িতে ব্রাহ্মণ-পৌরহিতরা ছোট তিন শিশু ও মৃত পাঁচ সন্তানের স্ত্রীদেরও বসানো হয়েছে স্বামীদের উদ্দেশে পি-দান করাতে। এ পিণ্ডদান শেষে ছোট্ট ছেলেদের ক্ষৌরকর্ম করানো হয়। পরে সবাইকে স্নান করিয়ে নতুন সাদা কাপড় পরানো হয়েছে। সবশেষে গৃহে প্রবেশ করতেই চারদিকে পড়ে যায় কান্নার রোল। বাড়ির এক পাশে আয়োজন করা হয় এ পি-দান ও ক্ষৌরকর্ম অনুষ্ঠানটি।
মৃত ডা. সুরেশ কান্তি সুশীলের স্ত্রী মৃণালীনি বালা সুশীল মানু বলেন, ‘আমার স্বামীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি মিনি ট্রাক সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে হবে কোনোদিন কল্পনাও করিনি। আমি এ ছোট নাতি-নাতনিদের নিয়ে কীভাবে থাকব বুঝতে পারছি না। আমি একবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
কক্সবাজার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এড. দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন বলেন, এ ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক।
একসঙ্গে পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যু, তিন ভাইবোন আহত এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা নয়। এটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, তা তদন্ত করে দেখা দরকার


আরো খবর: