জসিম সিদ্দিকী কক্সবাজার::
ইংরেজি নববর্ষ বরণে প্রতি বছর থার্টিফার্স্ট নাইটে পর্যটন শহর কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম হতো। কিন্তু এবার তেমন পর্যটক নেই। যে কারণে এ রকম একটি বিশেষ দিনেও কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউসে অর্ধেকেরও বেশি কক্ষ ফাঁকা রয়েছে। হোটেল মোটেল ফুল বুকিং থাকলেও আসেনি পর্যটকদল।
স¤প্রতি স¤প্রতি খাবারের দাম বেশি নেওয়া এবং পর্যটক নারীকে দলবেঁেধ ধর্ষণ এ দুটি ঘটনায় এ রকম রিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর থার্টিফার্স্ট নাইট ও নববর্ষ উদযাপনে কম হলেও লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। কিন্তু এ বছর ভিন্ন চিত্র। যে কারণে তারা হতাশ।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকালে সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা যায়, থার্টি ফার্স্ট নাইটে সরকারি নির্দেশনার কারণে সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে নেই কোন আয়োজন। তারপরও সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্টে বুকিং হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। তার মধ্যে কিছু বিদেশী পর্যটকও দেখা যায়। আর পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষনিক মাঠে থাকছে ২০৮ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ। আগতদের পর্যটন সুবিধা নিশ্চিতের জন্য ৭ দফা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এই সৈকতে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় জানাতে প্রতিবছর ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। তাই সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টকে সাজানো হয় নতুন সাজে। স¤প্রতি নেতিবাচক কিছু ঘটনা ঘটেছে সৈকতের এই শহরে। যার কারণে পর্যটক সংকটে শঙ্কা পড়েছে অনেকে। প্রতিবছর ইংরেজি পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয় সব হোটেল ও মোটেলকে। কিন্তু এবছর তা চোখে পড়ছেনা। তবে হোটেল মোটেলে কমেছে রুম বুকিং। থার্টি ফার্স্ট নাইট কেন্দ্র করে প্রতিবছর তারকামানের হোটেলগুলোতে থাকে নানা আয়োজন।
তারকামানের হোটেল কক্স টুডে’র ম্যানেজার আবু তালেব শাহ বলেন, পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক আগমন হবে। ইতিমধ্যে আশানুরূপ বুকিং হয়েছে। আর আগত পর্যটকদের আনন্দ দিতে হোটেলের অভ্যন্তরে সংগীতানুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন থাকছে। আশা করি, পর্যটকরা বেশ আনন্দ করতে পারবে।
সী গাল হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক অফিস ম্যানেজার তারেক সিদ্দিকী বলেন, শতভাগ রুম বুকিং হয়েছে। হোটেলকেও সাজানো হয়েছে। আশা করি, পর্যটকরা কক্সবাজারে এসে পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে ভালোভাবে বরণ করতে পারবে।
কলাতলীর হোটেল সী উত্তরার নির্বাহী কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের চিত্র ভিন্ন। পুরো কক্সবাজারের কোনো হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউসে তেমন পর্যটক নেই। তিনি বলেন, করোনাকালের দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে আমরা মনে করছিলাম, পর্যটনে কিছুটা সুদিন আসবে।
এ বিষয়ে কলাতলী জোনের হোটেল রেইন ভিউ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হোটেল মোটেল সমিতির নেতা মুকিম খান জানান, শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সংবাদকে জানান, কক্সবাজারে হোটেল মোটেল জোনের প্রায় ৪০ শতাংশ রুম খালি রয়েছে। তার মধ্যে ২০ শতাংশ বুকিং হওয়া পর্যটকরা আসেনি। অথচ অন্যান্য বছর এই সময়ে কোনো কক্ষই ফাঁকা থাকে না।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি খাবারের দাম বেশি নেওয়া আর ধর্ষণের ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। যার জন্য কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন অবস্থা কোনো সময় হয়নি।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বাস্তবে কক্সবাজারে কিন্তু পর্যটকদের নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই। সম্প্রতি যেটি ঘটেছে এটি বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তিনি আরও বলেন, স¤প্রতি খাবারের দাম বেশি নেওয়া এবং ধর্ষণ এ দুটি ঘটনায় কক্সবাজারের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে।
টুয়াকের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। পর্যটকরা শুধু কক্সবাজার নয়, সেন্টমার্টিন ও ইনানীতে যাবে। যার কারণে প্রশাসনও নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
এবিষয়ে কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, সা¤প্রতিক ঘটনার কিছুটা প্রভাব রয়েছে। তবে এ ধরনের ঘটনার যেন কোনোভাবেই আর পুণরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে সমুদ্র সৈকত ছাড়াও আশপাশের যেসব পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে সেখানেও ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, সমুদ্র সৈকতসহ আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমান টিম কাজ করছে। তাদের সকলের লক্ষ্য পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া। তিনি আরও জানান, পর্যটকদের আগমনকে ঘিরে নতুন করে পর্যটকদের পর্যটন সুবিধা নিশ্চিতের জন্য ৭ দফা বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।