শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

চিকিৎসকের বেশে হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা, নিহত ৩

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪
চিকিৎসকের বেশে হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা, নিহত ৩


জেরুজালেম, ৩০ জানুয়ারি – ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ও বেসামরিক নাগরিকের বেশে পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের একটি হাসপাতালে ঢুকে তিন ফিলিস্তিনিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ইসরায়লের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গত ৮ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার এই ধরনের ছদ্মবেশী অভিযান পরিচালনা করেছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির একজন আলোকচিত্রী জেনিনের ইবনে সিনা হাসপাতালে অভিযানের পর রক্তে ভিজে যাওয়া একটি বালিশে বুলেটের ছিদ্র দেখতে পান। এর পাশেই নিহতদের মরদেহ ঘিরে আছেন ফিলিস্তিনিরা।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, জেনিন শহর ও এর আশপাশের শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দাদের সেবাদানকারী প্রধান একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘‘হামাসের সন্ত্রাসী সেল’’ রয়েছে। এই সেলকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালে প্রবেশ করেছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, হাসপাতালের ভেতরে ইসরায়েলি বাহিনী তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যদিও আন্তর্জাতিক আইনে স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী এই আইন লঙ্ঘন করেছে।

হাসপাতালে হামলার ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীকে জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। এই গোষ্ঠীর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের জনগণ এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে দখলদারদের সংঘটিত অপরাধ বন্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর ছদ্মবেশ ধারণ করে চালানো অভিযানের দৃশ্য ধরা পড়েছে সিসিটিভি ফুটেজে। এতে দেখা যায়, সশস্ত্র বন্দুকধারী ইসরায়েলি নারী ও পুরুষ সৈন্যরা মেডিক্যাল এবং বেসামরিক মানুষের পোশাক পরে জেনিনের হাসপাতালে প্রবেশ করছেন। এ সময় হাসপাতালের রোগীদের হুইলচেয়ারে করেও তাদের প্রবেশ করতে দেখা যায়। বাচ্চাদের বহনকারী গাড়ি নিয়েও ভেতরে প্রবেশ করেন ছদ্মবেশী ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর সদস্য ও অ্যাজেন্টরা।

জেনিনের ইবনে সিনা হাসপাতালের পরিচালক নাজি নাজ্জাল এএফপিকে বলেছেন, একদল ইসরায়েলি সৈন্য গোপনে হাসপাতালে প্রবেশ করে পুরুষদের হত্যা করেছে। তারা সাইলেন্সার লাগানো অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

হাসপাতালের ভেতরে এএফপির আলোকচিত্রী মাদুর, চেয়ার ও দেয়ালজুড়ে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখেছেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ওয়াফা বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালে ঢুকে মুহাম্মদ জালামনাহ, মুহাম্মদ আয়মান গাজাবী এবং বাসেল আয়মান গাজাবী নামের তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, ‘‘হাসপাতালের পুনর্বাসন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলাকালীন বাসেল গাজাভিকে হত্যা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীগোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ মুহাম্মদ আয়মান গাজাবী ও বাসেল আয়মান গাজাবীকে তাদের যোদ্ধা বলে দাবি করেছে। আর হামাস বলেছে, জালামনাহ তাদের সশস্ত্র শাখার কমান্ডার ছিলেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, নিহত তিনজনই ‘সন্ত্রাসী’। তারা হাসপাতালে লুকিয়ে ছিলেন।

গত ৭ অক্টোবর সীমান্ত পেরিয়ে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস। এই হামলার পরপরই গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তখন থেকে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২৬ হাজার ৭৫১ জনে পৌঁছেছে। যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ৩০ জানুয়ারি ২০২৪





আরো খবর: