সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

চকরিয়ায় পাত্রীর ঠিকানা ভিন্ন দেখিয়ে ১০দিনে দুই যুবককে বিয়ে ; পরিচয় নিয়ে বিপাকে পুলিশ

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২

ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার বাসিন্দা জন্নাতুল ফেরদৌস (২৩) নামের এক নারী কক্সবাজারের চকরিয়ায় এসে দশদিনের ব্যবধানে দুই যুবকের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। ২০২১ সালের ৬জুলাই চকরিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাহারিয়াঘোনা গ্রামের সিরাজুল হক বাদশার ছেলে জুনাইদুল ইসলাম পাভেলকে মুসলিম আইনে সামাজিক রীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন। সংসারও শুরু করছিলেন যথারীতি। কিন্তু প্রথম স্বামীর জুনাইদুল ইসলাম পাভেল এর সঙ্গে থাকাবস্থায় ২০২১ সালের ১৬ জুলাই পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ভাঙ্গারমুখ এলাকার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে জামাল নামের অপর যুবককে। আবার বিয়ের কাগজপত্রে ওই নারী দিয়েছেন ভিন্ন দুইটি ঠিকানা। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।

ভুক্তভোগী প্রথম স্বামী জুনাইদুল ইসলাম পাভেলের পরিবারের দাবি, প্রথম স্বামীর সংসারে থাকাবস্থায় পালিয়ে অপর যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করায় ওই নারীকে ডির্ভোস দিতে বাধ্য হন প্রথম স্বামী জুনাইদুল ইসলাম পাভেল। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে ওই নারীর দেনা-পাওনা মিটিয়ে এরপর জীবিকার তাগিদে প্রথম স্বামী পাভেল প্রবাসে চলে যান। কিন্তু ততদিনে বিপদগামী ওই নারী দ্বিতীয় বিয়ে করলেও সেখানে তাঁর সংসার জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দেনমোহর বাবত ক্ষতিপুরণ আদায় করে সেই সংসার থেকে সরে যান। পরক্ষনে ওই নারী আবারও প্রথম স্বামীর ঘরে ফিরতে নানাধরণের চলচাতুরী করতে শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ৪ কক্সবাজার (সদর) আদালতে একটি সিআর মামলা (নং ৫৬৬/২১) করেন প্রথম স্বামী জুনাইদুল ইসলাম পাভেলকে আসামি করে। যদিও বিবাদি পাভেল অনেক আগে চলে যান প্রবাস জীবনে।

প্রথম স্বামী পাভেলের মা আবছারু বেগম (৫০) বলেন, আমার প্রবাসী ছেলে জুনাইদুল ইসলাম পাভেলের সঙ্গে ২০২১ সালের ৬ জুলাই ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন ফেনী জেলার উপজেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর কুহুমা এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিনের মেয়ে জন্নাতুল ফেরদৌস। এমনকি আমার বাড়িতে থাকাবস্থায় আমার ছেলের অনুপস্থিতিতে এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় বাঁধা দিলে ছেলের স্ত্রী জন্নাতুল ফেরদৌস আমার বাড়িতে সংসার জীবন অতিক্রমকালে দশদিনের মাথায় ২০২১ সালের ১৬ জুলাই এ নারী (বাড়িতে আমার ছেলের ওরশে জন্ম নেয়া ছেলে) নাতীকে রেখে পালিয়ে বিয়ে করেন চকরিয়া পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ এলাকার জামাল নামের অপর এক যুবককে।

আবছারু বেগম অভিযোগ করে বলেন, পালিয়ে যাওয়ার পর অভিযুক্ত জন্নাতুল ফেরদৌস বিভিন্ন সময় আমার বাড়িতে এসে অশালিন গালিগালাজ করতো এবং হুমকি দিত। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৬ ফেব্রæয়ারী বহিরাগত কিছু লোক নিয়ে আমার বাড়িতে এসে হামলা চালিয়ে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। এ ঘটনায় এলাকাবাসি ও মসজিদ কমিটির সদস্যসহ মোট ১০৩ জন নাগরিক ওই নারীর কারণে এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেরা বিপদগামি হচ্ছে দেখে লিখিতভাবে চকরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া এ ঘটনায় আমি বাদি হয়ে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রæয়ারী অভিযুক্ত জন্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করি। ওই মামলাটি আদালতে বিচারধীন।

মামলার আর্জিতে বাদি আবচারু বেগম বলেন, আমার ছেলে পাভেলের সঙ্গে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারী জন্নাতুল ফেরসৌসের প্রথমবার বিয়ে হয়। সেসময় তাদের সংসারে আবরার ইসলাম জিহান নামের এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আমার ছেলে প্রবাসে থাকাবস্থায় জন্নাতুল ফেরদৌস পালিয়ে ২০২১ সালের ১৬ জুলাই অপর যুবককে বিয়ে করলে তাকে মুসলিম আইন মতে তালাক দেওয়া হয়। সেইসময় তাঁর সব দেনা-পাওনাও বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে নাবালক শিশু সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে আমার প্রবাসী ছেলে ওই নারীকে বিয়ে করতে সিদ্বান্ত নেন। কিন্তু সেই মুহুর্তে আমার ছেলে প্রবাসে থাকলেও আমার পরিবারকে হয়রাণি করার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারী বিপদগামী জন্নাতুল ফেরদৌস বাদি হয়ে সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কক্সবাজার (সদর) আদালতে নতুন একটি মামলা (নং ৮৯/২২) রুজু করেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে পাভেলের বাবা সিরাজুল হক বাদশা(৫০), চাচা মাহমুদুল হক (৪৫), পাভেলের ভাই সাইমুন (২৩) ও আজিজু বেগম (৪৫) সহ চারজনকে। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া হাঙ্গরপাড়াস্থ এসএম নবী হোসেনের ভাড়া বাসায়। আবছারু বেগমের অভিযোগ, মুলত বিপদগামী নারী জন্নাতুল ফেরদৌস আমার পরিবারকে হয়রাণি করার জন্যই এই সাজানো মামলাটি করেছে। মামলার আর্জিতে মতে ঘটনার সঙ্গে আমার পরিবার সদস্যরা কোনমতে জড়িত নন। এই অবস্থায় অযথা হয়রাণি থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা পরিবার বিজ্ঞ আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি।

আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি চকরিয়া থানার এসআই সীবা রানী বড়–য়া তদন্ত করছেন। জানতে চাইলে এসআই সীবা রানী বড়–য়া বলেন, আমি কয়েকদিন আগে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বদলী হয়েছি। তবে বিজ্ঞ আদালত থেকে প্রেরিত সিআর মামলাটি তদন্তভার পেয়ে আমি বাদি জন্নাতুল ফেরদৌস নামের ওই নারীর দেওয়া ঠিকানা ফেনী জেলার উপজেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর কুহুমা এলাকায় নোটিশ প্রেরণ করি। ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ ওই ঠিকানা তল্লাসি করে তাঁর সন্ধান পায়নি। মামলার আর্জিতে দেওয়া মোবাইল ফোনে কথা বললেও তিনি (বাদি) চকরিয়া থানায় উপস্থিত হচ্ছেনা।

তিনি বলেন, আমি বদলী হয়ে চলে আসার পর মামলাটি তদন্তের জন্য অন্য একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত: জুনাইদুল ইসলাম পাভেলের সঙ্গে বিয়ে, মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্রে জন্নাতুল ফেরদৌস ঠিকানা হিসেবে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর কুহুমা এলাকা উপস্থাপন করেছেন। অপরদিকে দ্বিতীয় স্বামী জামালের সঙ্গে বিয়ে ও তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে ঠিকানা দিয়েছেন ভিন্ন এলাকা। তাতে লেখা হয়েছেফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার কৌড়ইয়া বাজার এলাকা। ওই নারীর দুই ঠিকানা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।


আরো খবর: