ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং জলোচ্ছ্বাসে
এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া::
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং তাণ্ডবে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে রকমারি সবজি খেত ও চিংড়িজোনের অন্তত চার শতাধিক ঘেরে বেসুমার ক্ষতিসাধন হয়েছে। সোমবার রাতে বয়ে যাওয়া ঘুর্ণিঝড়ের দমকা হাওয়ায় বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। একইভাবে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের পানি বেড়ে গিয়ে চিংড়িজোনে প্লাবিত হওয়ায় ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশিরভাগ ঘেরের বেড়িবাঁধ ও অবকাঠামো।
অপরদিকে ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নে বসতবাড়ির গাছ পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন শিক্ষার্থীসহ দুইজন। তারা হলেন ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ছাইরাখালী এলাকার আরফ আলীর মেয়ে স্থানীয় মদিনাতুল উলুম মাদরাসার ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী আশরাফুল জন্নাত লিজা (১২) ও দক্ষিণ ছাইরাখালী এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে খোরশেদ আলম (৩৫)। গতকাল সকালে তাদেরকে চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতির হলে তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন কতর্ব্যরত চিকিৎসক। বর্তমানে তারা চমেক হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল বিকালে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জেপি দেওয়ান। এসময় তিনি তাৎক্ষনিকভাবে দুইজনের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার উপস্থিতিতে অনুদানের টাকা বিতরণকালে ইউপি সদস্য মহি উদ্দীন মহি ও ইউপি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম তুহিন এবং আহতদের পরিবার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
চকরিয়ার রামপুর পালাকাটা চরণদ্বীপ ঘের মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম উল্লাহ বলেন, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং তাণ্ডবে চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোন জলোচ্ছ্বাসের পানিতে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার চরণদ্বীপ মৌজার ৭, ১৭,১৮,২১,২৭ দাগের অধীনে মোট ১০ হাজার একর, পালাকাটা মৌজার ২৭৫৮ দাগের ১৭০০ একর, রামপুর মৌজার মৎস্য বিভাগের সহ মোট ৫১১২ একর, বদরখালী মৌজার ২৫০০ একর এবং করিয়ারদিয়া মৌজা ও চিলখালী মৌজার মোট ২০ হাজার একর চিংড়িজোনের মৎস্যঘের পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে মাছ ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি ঘেরগুলোর অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা মো.সাইফুল্লাহ বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিক ও চাষীদের কাছে ক্ষতিসাধনের তথ্য চেয়েছি। সবাই তাদের ক্ষতিসাধনের তালিকা জমা দিলে মোট ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করে জেলায় পাঠাবো।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেন, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং তাণ্ডবে চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় রকমারি সবজি খেতের কমবেশি ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিশেষ করে বেশিরভাগ নীচু জমির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়েছে। আমরা প্রতিটি ব্লক থেকে কৃষকের কী পরিমাণ ক্ষতিসাধন হয়েছে তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ##