সকল আতংক-উৎকন্ঠার অবসান ঘটিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়ার আট ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) অবাধ নির্বাচনে নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে নারী-পুরুষ ভোটাররা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
দুই ইউনিয়নে ইভিএম’এ ও ছয় ইউনিয়নে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নেয়া হয়। এই আটটি ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ায় সাতটিতে চেয়ারম্যান পদে এবং আটটি ইউপিতেই সংরক্ষিতসহ সদস্য পদে ভোট নেয়া হয়। প্রশাসনের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার কারণে অনাকাংখিত কোন ঘটনা ঘটতে পারেনি।
জুডিসিয়ালসহ ২১জন ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব-বিজিবি, পুলিশ ও আনসার ব্যাটলিয়নের সদস্যরা ভোটের আগের রাত থেকে কেন্দ্রে ভোট গণনার পর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন মোহনায় নেয়া পর্যন্ত কড়া নজরদারিতে রাখে।
ভোট শুরুর পর সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, আটটি ইউনিয়নের ৭৩টি কেন্দ্রেই ভোটারদের দীর্ঘ সারি। তারা ধর্য্যসহকারে নিজ নিজ পছন্দনীয় প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টায় বরইতলী ইউনিয়নের বরইতলি দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পৌছে কথা হয় ভোটারদের সাথে। ওইসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামানও নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি ওইসময় বলেন, যেভাবে ভোট চলছে সেভাবে চললে হার-জিত মেনে নেবো।
কেন্দ্রে গেলে প্রিসাইডিং অফিসার আজগর হোছাইন বলেন, এই কেন্দ্রে ২’হাজার ২৬৩ ভোটারের মধ্যে দেড় ঘন্টায় ৬টি বুথে ভোট প্রয়োগ হয়েছে ২৯৩টি।
সকাল সাড়ে ১০টায় নিকটবর্তী ইউনিয়ন হারবাংয়ের কুসুমকলি শিক্ষানিকেতন কেন্দ্রে গেলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মনির আহমদ বলেন, তার কেন্দ্রে ৩হাজার ১৮৬ ভোটার রয়েছে। আড়াই ঘন্টায় ৮টি বুথে ৮১০জন ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন।
দুপুর দেড়টায় ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে কথা হয় প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ মুবিনুল হকের সাথে। তিনি বলেন এই কেন্দ্রে ভোটার রয়েছেন ৩হাজার ৮৯১জন। সাড়ে ৫ ঘন্টায় ভোট প্রয়োগ করেছেন ২ হাজার ভোটার।
কয়েকদিন ধরে ব্যাপক আলোচনায় ছিলো চিরিংগা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে বহিরাগতদের আনাগোনা হওয়ায় ভোটারদের মাঝে আতংক-উৎকণ্ঠা ছিলো নির্বাচন সুষ্টু হবে কিনা তা নিয়ে। কিন্তু সেই উৎকন্ঠার অবসান ঘটিয়েছে প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্ততি পূর্বক ভোট প্রয়োগের শুরু থেকে কঠোর নজরদারি কারণে।
ভোট প্রয়োগ শেষে বরইতলির ৫নং কেন্দ্রে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের রেজাল্ট সিট দেয়া নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওইসময় কেন্দ্রের অদূরে সড়কে গাছ পেলে ব্যড়িকেড সৃষ্টি করে চশমা প্রতিকের সমর্থকরা। তাদের দাবি ছিলো কেন্দ্রেই রেজাল্ট সিট এজেন্টদের হাতে দিতে হবে। এই দাবির প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ভোট প্রাপ্তির কেন্দ্রেই এজেন্টদের দেয়া হয় ত্রিশ মিনিট পর।
রাত সাড়ে ৮টার পর থেকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন মোহনায় নির্বাচন কর্মকর্তা মো.শহিদুল ইসলাম আট ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান- সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের বেসরকারী ফলাফল ঘোষনা শুরু করেন।
রাত সোয়া ১০টার দিকে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- বমু-বিলছড়ি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মঞ্জুরুল কাদের, হারবাং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হেলাল উদ্দিন হেলালী, চিরিংগা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ডুলাহাজারা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসানুল ইসলাম আদর, বরইতলি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান, খুটাখালী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রহমান। এর আগে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় ফের নির্বাচিত হন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ইউপি নির্বাচনে সমন্বয়ক সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কড়া নজরদারির কারণে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নেয়া সম্ভব হয়েছে।