এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
টানা ৬ দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার সকালের দিকে উপজেলার বেশিরভাগ নীচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বেড়ে গেলে নদীতে ঢলের প্রভাব বাড়বে। তাতে উপজেলার একাধিক এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্লাবিত হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পাউবোর কর্মকর্তারা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টানা ৬ দিনের
টানা বৃষ্টির কারণে মাতামুহুরী নদীতে ভয়াবহ বন্যার পদধ্বনির পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার বরইতলী পহরচাদা, ফাসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী ও বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি লুটের কারণে বেশিরভাগ পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে গেছে। এতে এসব এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন সেখানে বসবাসরত কয়েক হাজার পরিবার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তাগুলো পানির নিচে তলিয়ে থাকায় চলাচলে বিপর্যয় নেমে এসেছে। একাধিক স্কুল মাদরাসা মাঠে হাঁটু সমান বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে টানা ৬দিন ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে চকরিয়া পৌরসভা, উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বরইতলী, চিরিঙ্গা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল ও পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব গ্রামের সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় মাতামুহুরী নদীর পানিও বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। ছড়াখাল দিয়ে জমে থাকা পানি বের হতে না পারায় জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষ্যাধিক মানুষ। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বরইতলী, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল ও পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, আমাদের ইউনিয়নগুলো মাতামুহুরী নদীসংলগ্ন। নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ গ্রামে ঢলের পানি প্রবেশ করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা-ঘাটসহ অধিকাংশ বসতঘরে পানি উঠেছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চকরিয়া উপজেলায় মাঝারি বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা ও নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ভুমি ধসের আশঙ্কাও রয়েছে। ইতোমধ্যে উপকূলের মৎস্য ঘেরের স্লুইচ গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সার্বক্ষণিক এলাকার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নির্দেশ হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করা লোকজনকে সমতলের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা শাখা কর্মকর্তা (এসও) জামাল মোর্শেদ বলেন, টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতকাল বিকালের দিকে ঢলে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বেড়ে গেলে নদীতে ঢলের প্রভাব বাড়বে। তাতে উপজেলার একাধিক এলাকায় ৬৫ নম্বর পোল্ডারের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্লাবিত হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পাউবোর এই কর্মকর্তা।