এথেন্স, ০১ মার্চ – গ্রিসের উত্তরে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ৩৬ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়াও অনেক মানুষ আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ৩৫০ যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে একটি মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনটির প্রথম দুটি বগিতে আগুন ধরে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর।
গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় শহর লারিসায় এ দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকর্মীরা সেখানে সারা রাত উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন। গ্রিসের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটিকে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
রেলওয়ে ইউনিয়নের প্রধান গ্রিসের স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কিভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটল তা এখনো স্পষ্ট নয়।
দুঃস্বপ্নের ১০ সেকেন্ড
ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে জীবন বাঁচিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী স্টারজিওস মিনেনিস। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই। ট্রেনের কামরার মধ্যে আমরা গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম। তারপর এটি গড়িয়ে একদিকে থামল, তারপর সবার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হলো। চারদিকে তার ঝুলছে, আগুন। সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে গিয়েছিল। আমরা আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘১০-১৫ সেকেন্ড ধরে চরম বিশৃঙ্খলা চলেছে। একজন আরেকজনের ওপর গিয়ে পড়ছে, ওপর থেকে তার ঝুলছে, চারিদিকে ভাঙা জানালা, লোকজন চিৎকার করছে।’
যাত্রীরা জানিয়েছেন, ট্রেন থেকে বের হওয়ার জন্য তাদেরকে জানালার কাচ ভাঙতে হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। কোনো প্রাথমিক ধারণা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রিসে এটিকে দেশটির ইতিহাসের ভয়ংকরতম দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। দেড় শতাধিক দমকল কর্মী এবং ৩০টি অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করছে।
আঞ্চলিক গভর্নর কোস্টাস আগোরাস্টস জানিয়েছেন, দুই ট্রেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ ছিল বেশ তীব্র। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এটি এক ভয়ংকর রাত, এই দৃশ্য বর্ণনা করা কঠিন।
যাত্রীবাহী ট্রেনটির প্রথম চারটি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং প্রথম দুটি বগিতে আগুন ধরে যায় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ট্রেন দুটি বেশ উচ্চগতিতে চলছিল এবং চালক জানত না যে বিপরীত দিক থেকে আরেকটি ট্রেন আসছে।’
পরিশ্রান্ত এক উদ্ধারকর্মী এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি আমার পুরো জীবনে এ রকম ঘটনা দেখিনি। খুবই মর্মান্তিক দৃশ্য। পাঁচ ঘণ্টা পরও আমরা এখানে মরদেহ খুঁজে পাচ্ছি।’
এ দুর্ঘটনার পর গ্রিসে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিটসোটাকিস দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ রকম দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটল, তা খুঁজে বের করা এবং এমন যাতে আর না ঘটে তার ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
সূত্র: কালের কন্ঠ
আইএ/ ০১ মার্চ ২০২৩