ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি – বাংলা চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি নায়ক ছিলেন রাজ্জাক। যিনি নায়করাজ রাজ্জাক নামে সুপরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্র পত্রিকা চিত্রালীর সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী তাকে নায়করাজ উপাধি দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অত্যন্ত প্রতাপের সঙ্গে তিন শতাধিক বাংলাদেশি সিনেমা এবং বহু ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কাজ করেছেন উর্দু সিনেমাতেও।
চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও নাম করেছিলেন রাজ্জাক। জীবদ্দশায় তিনি ১৬টি সিনেমা পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিজের মালিকানাধীন রাজলক্ষী প্রোডাকশন হাউজ থেকে বেশ কয়েকটি সিনেমা প্রযোজনাও করেন। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তিনি সাতবার জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৩ সালে পান আজীবন সম্মাননা। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেয় স্বাধীনতা পুরস্কার।
এছাড়া নামীদামি আরও বহু পুরস্কার এখনো সাজানো রয়েছে রাজ্জাকের শোকেজে। কিন্তু তিনি নেই। আজ সেই প্রয়াত কিংবদন্তি ও গুণী অভিনেতার জন্মদিন। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবার নাম আকবর হোসেন ও মাতার নাম নিসারুননেছা। রাজ্জাকরা ছিলেন নাকতলা এলাকার জমিদার।
জন্মস্থান কলকাতায় সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মঞ্চ নাটক দিয়ে রাজ্জাকের অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে তিনি পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৬৬ সালে ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমায় একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে তাঁর অভিষেক ঘটে। এরপর চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
নায়ক হিসেব রাজ্জাকের প্রথম চলচ্চিত্র জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। কলকাতার টালিগঞ্জ থেকে আসা ছেলেটাই একদিন হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা। ওপার বাংলায় জন্ম নিলেও এপার বাংলার রুপালি রঙেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন নায়করাজ। তবে শুধু নায়ক হিসেবে নয়, পরবর্তীতে বড় ভাই ও বাবার চরিত্রেও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
রাজ্জাক তাঁর ক্যারিয়ারে এত হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন যে, নির্দিষ্ট করে কয়েকটার নাম বলা মুশকিল। তার পরও কয়েকটির নাম উল্লেখ না করলেই নয়। সেগুলো হলো- বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, এতুটুকু আশা, নীল আকাশের নিচে, জীবন থেকে নেয়া, নাচের পুতুল, অশ্রু দিয়ে লেখা, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিল, গুন্ডা, অনন্ত প্রেম, অশিক্ষিত, ছুটির ঘন্টা, মহানগর, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, স্বরলিপি, বাদী থেকে বেগম, বাবা কেন চাকর ইত্যাদি।
১৯৬২ সালে লক্ষ্মীকে বিয়ে করেন রাজ্জাক। জন্মস্থান টালিগঞ্জে রাজ্জাকের এক আত্মীয়ের বাড়ির পাশে ছিল লক্ষ্মীদের বাড়ি। সেই আত্মীয়দের একজন লক্ষ্মীকে বাড়ির সামনে দেখে পছন্দ করেন এবং বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। সেদিন রাজ্জাক আর লক্ষ্মীর আংটিবদল হয়। এর দুই বছর পরে তাদের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাট। তারাও চলচ্চিত্র অভিনেতা। এছাড়া নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসাইন বাপ্পি ও আফরিন আলম ময়না নামে তাদের তিনটি মেয়েও আছে।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনের যশ-খ্যাতি, অসংখ্য সম্মাননা, স্ত্রী-সন্তান- সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান নায়করাজ রাজ্জাক। এদিন সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে তিনি নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিনই রাজ্জাককে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আইএ/ ২৩ জানুয়ারি ২০২৪