মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

ঈগলের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে মরিয়া নৌকা

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
আপডেট: বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

কক্সবাজার-৪ ( উখিয়া-টেকনাফ) আসনে নির্বাচনে ৭ প্রার্থী থাকলেও এখন পর্যন্ত সাধারণ ভোটারদের যত হিসাব-নিকাশ বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিন আক্তার এবং স্বতন্ত্রের আবরণে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশরকে ঘিরে।

এ দুই প্রার্থী মাঠে গণসংযোগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানার রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। নিজ দলের দুই প্রার্থীকে নিয়ে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন। আবার অনেকে নির্বাচনে কোন প্রার্থী বিজয়ী হবেন তা নিয়ে পড়ে গেছেন দোটানায়।

কারণ এ মুহূর্তে সিদ্ধান্তে ভুল করলে পরে রাজনীতিতে মাশুল দিতে হবে বেশি। তাই কোন দিকে পা বাড়াবেন তা নিয়ে তারা কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছেন। আবার এ দুই প্রার্থীকে ঘিরে আওয়ামী লীগের অনেকে আপাতত নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।

উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি স্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার এবার কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা। এ আসনে শাহীন আক্তারের স্বামী আবদুর রহমান বদি (২০০৮ ও ২০১৪) সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।

স্বাভাবিকভাবে এবারও সাধারণ ভোটারেরা মনে করেছিলেন তাকেই আওয়ামী লীগ সমর্থন দেবে। কিন্তু এবারও তার ব্যত্যয় ঘটে। আইনি জটিলতার কারনে আবদুর রহমান বদি নির্বাচন করতে না পারার কারনে তার ইচ্ছে বা চাহিদা অনুযায়ী গতবারের মতো এবারও তার স্ত্রী শাহিন আক্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে আবদুর রহমান বদি এবার সহ টানা ৪ বার নৌকা প্রতীক তার পরিবারের দখলের রেখে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নরুল বশর । তার প্রতীক ঈগল । টেকনাফ উপজেলায় তার রয়েছে ব্যাপক নিজস্ব কর্মী-সমর্থক। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকেই অদ্যবধি একটানা টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। যার কারনে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ মূল অঙ্গ সংগঠন গুলো ঈগল প্রতীক তথা নুরুল বশরকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষেই কাজ করছেন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকায় শাহীন আক্তারের সাথে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ মূল অঙ্গ সংগঠনের বেশিরভাগ নেতার সমর্থন রয়েছে। তারা নৌকা প্রতীক তথা শাহিন আক্তারের পক্ষে কাজ করছেন। তবে শাহিন আক্তার বর্তমান এমপি হওয়ার পরও গত ৫ বছর এলাকায় না থাকার কারনে নুরুল বশরের মতো তৃণমূলে তার (শাহিন আক্তারের) কর্মী-সমর্থক তুলনামূলক কম এবং সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু শাহিন আক্তারের স্বামী সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদির মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি রয়েছে। এছাড়াও এলাকায় আবদুর রহমান বদি একজন দানবীর হিসাবে সমাদৃত ও প্রচার রয়েছে। তাই স্থানীয় ভোটারদের মতে, উখিয়া-টেকনাফ আসনে এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তাছাড়া উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিজের কাছে টানতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন এ দুই প্রার্থী। মাঠে গণসংযোগের চেয়ে তারা দলীয় কর্মীদের নিজের পক্ষে নিতে সময় ব্যয় করছেন বেশি। কিন্তু উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা কর্মীরা সম্পুর্ন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ নুরুল বশরের পক্ষে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ শাহিন আক্তারের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছে।

গত তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে আবদুর রহমান বদি ২ বার ও শাহিন আক্তার ১বার খুব সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে স্বামী-স্ত্রী টানা ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার শাহিন আক্তারকে বেশ বেগ পেতে হবে বলে জানিয়েছেন ভোটারেরা। এ কারণে ভোটারদের মাঝে শাহিন আক্তারকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে খুবই কম। ইতোমধ্যে তিনি বাড়িতে নির্বাচনী প্রস্তুতিসভা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করছেন।

উখিয়া-টেকনাফ আসনে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন, এরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর (ঈগল), আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো (লাঙল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামি ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরি (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)।

নির্বাচনে এখনও শাহিন আক্তার, নুরুল বশর ও নুরুল আমিন সিকদার ভূট্টোর ছাড়া অন্য প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত পোস্টারও বের করেননি, চোখে পড়ছে না তাদের গণসংযোগও। এনির্বাচনে জাতীয় পাটির প্রার্থী অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভূট্রোও কম যান না। তিনিও নির্বাচনে লাঙল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট লড়াইয়ে টিকে থাকতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে সাংগঠনিক অবস্থার কোন ভিত্তি না থাকায় তিনি এখনও মাঠ দখলে নেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেননি।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১জন। এর মধ্য ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৪১ পুরুষ, ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৮ নারী এবং ২ জন হিজড়া।


আরো খবর: