লন্ডন, ২১ আগস্ট – যুক্তরাজ্যে একে একে সাত শিশুকে হত্যা করা নার্স লুসি লেটবিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২১ আগস্ট) ম্যানচেস্টারের ক্রাউন আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। ৩৩ বছর বয়সী এ ‘সিরিয়াল কিলার’ যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে তৃতীয় নারী, যাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিজার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রায় ঘোষণার সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন না লুসি। রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষে নিস্তব্ধতা নেমে আসে ও নিহত শিশুদের দু-একজনের মা-বাবা কেঁদে ওঠেন।
রায় ঘোষণার সময় লুসিকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, আপনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিচ্ছি। পাশাপাশি আমি এটাও নির্দেশ দিচ্ছি যে, জীবিত থাকা পর্যন্ত আপনার মুক্তির কোনো আবেদন যেন কোনো আদালত গ্রহণ না করেন।
যুক্তরাজ্যের কাউন্টেস অব চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন লুসি লেটবি। সেখানেই তিনি সাতটি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ও ছয়টি হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটিয়েছেন। লুসি লেটবিকে আধুনিক যুক্তরাজ্যে শিশু হত্যায় সবচেয়ে বড় ‘সিরিয়াল কিলার’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র এক বছরের মধ্যে সবগুলো অপরাধ সংঘটন করেন লুসি। গত বছরের অক্টোবর থেকেই লুসি লেটবির বিচার শুরু হয়। অসুস্থ বা প্রিম্যাচিউর সাতটি শিশুর শরীরে ইনজেকশন দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে, অতিরিক্ত দুধ খাইয়ে বা ইনসুলিন দিয়ে হত্যা করেছেন তিনি।
লুসির এ কাণ্ড পুরো বিশ্বকে হতভম্ব করে দিয়েছে। অনেকেই শিশুগুলোকে ঠিক কী কারণে লুসি ওই শিশুদের হত্যা করেছেন তা জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, লুসি কেন এমন অমানবিক কাজ করেছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কিছু কারণ আদালতে তুলে ধরেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে এক চিকিৎসকের প্রতি লুসির দুর্বলতা ও গোপন সম্পর্কের বিষয় উল্লেখ করা হয়।
শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, হাসপাতালটিতে কোনো শিশুর অবস্থা গুরুতর হলেই ওই চিকিৎসককে ডাকা হতো। তাই লুসি হয়তো শিশুদের অবস্থা ইচ্ছা করে গুরুতর বানিয়ে ওই চিকিৎসককে কাছে পেতে চাইতেন।
আদালতের নথিতে উল্লেখ রয়েছে, লুসি ও সেই চিকিৎসক হাসপাতালের বাইরে বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলেন। এমনকি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের মধ্যে হওয়া কথোপকথনগুলো ভালোবাসার ইমোজিতে ভরা। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন লুসি লেটবি।
বিচারকদের কাছে লুসি দাবি করেন, যেসব শিশুকে কম যত্ন নিতে হতো, তাদের পরিচর্যা করে কোনো আনন্দ পেতেন না তিনি। শিশুরা বেশি অসুস্থ থাকলেও, কাজে মনোযোগ বসতো তার।
আইনজীবীরা বলেছেন, মানসিকভাবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিলেন লুসি। শিশুদের ক্ষতি করে তিনি হয়তো নিজেকে সৃষ্টিকর্তার মতো শক্তিমান ভাবতেন ও এ থেকে তিনি আনন্দ পেতেন।
জানা গেছে, এর আগেও লুসিকে দুইবার আটক করা হয়েছিল। ২০২০ সালে তৃতীয়বার আটকের পর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়। সেসময় তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হাসপাতালের কিছু কাগজপত্র ও হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেগুলোর একটিতে লেখা ছিল, আমি ওদের হত্যা করেছি। কারণ, আমি খুব ভালো পরিচর্যা পারি না। আরেকটি কাগজে তিনি লিখেছিলেন, আমি কখনোই বিয়ে করবো না, সন্তানও নেবো না। পরিবার কেমন হয়, তা আমি জানতেই পারবো না।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ২১ আগস্ট ২০২৩
সম্পুর্ন খবরটি পড়ার জন্য এই লিঙ্কে ক্লিক করুন ::আমৃত্যু জেলে থাকার সাজা পেলেন যুক্তরাজ্যের সিরিয়াল কিলার সেই নার্স first appeared on DesheBideshe.