মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

আবারও ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে চলে যেতে বললেন ইসরায়েলি মন্ত্রী

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: সোমবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৪

 

জেরুজালেম, ০১ জানুয়ারি – ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় তিন মাস ধরে চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ২২ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট।

এমন অবস্থায়ই ফিলিস্তিনিদের আবারও গাজা উপত্যকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। সোমবার (১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। মূলত ইসরায়েলিদের জন্য পথ তৈরি করে তিনি এই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যেন (ইসরায়েলিরা) ‘মরুভূমিকে প্রস্ফুটিত করে তুলতে পারে’।

রোববার ইসরায়েলি আর্মি রেডিওতে কথা বলার সময় এই মন্তব্য করেন স্মোট্রিচ। তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় যা করা দরকার তা হলো (ফিলিস্তিনিদের) দেশত্যাগকে উৎসাহিত করা। যদি গাজায় ২০ লাখ আরব জনগোষ্ঠীর পরিবর্তে কেবল এক লাখ বা দুই লাখ আরব থাকেন, তাহলে পরের দিন থেকেই সেখানকার পুরো আলোচনা সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে।’

তিনি আরও বলেন, গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যা যদি ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার আকাঙ্ক্ষায় বেড়ে উঠতে’ না থাকে তবে এই ভূখণ্ডটিকেও (গাজাকে) ইসরায়েলে অন্যভাবে দেখা হবে। তার ভাষায়, ‘ইসরায়েলি সমাজের বেশিরভাগ মানুষই বলবে: ‘কেন নয়? এটি একটি সুন্দর জায়গা, আসুন মরুভূমিকে প্রস্ফুটিত করি, এটি কোনও সংঘাতের মাধ্যমে হবে না’।’

জবাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গাজার শাসন ক্ষমতায় থাকা হামাস বলেছে, ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করার এবং তাদের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজায় রাখার যে আহ্বান স্মোট্রিচ জানিয়েছে তা ‘বর্বর আগ্রাসনের পাশাপাশি একটি যুদ্ধাপরাধও’।

এক বিবৃতিতে হামাস আরও বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘকে অবশ্যই ইসরায়েলের অপরাধ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি যা করেছে তার জন্য তাকে (ইসরায়েলকে) জবাবদিহি করতে হবে।

তেল আবিব থেকে আল জাজিরার সারা খাইরাত জানিয়েছেন, স্মোট্রিচের এই মন্তব্য ‘এমন একটি আখ্যান বা আকাঙ্ক্ষার সাথে যুক্ত যে অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ইসরায়েল গাজা পুনরায় দখল করতে চায়’।

খাইরাত বলেন, ‘তারা ফিলিস্তিনিদের নিজের ভূখণ্ডের বাইরে ঠেলে দিতে চায়, এমন ধারণাকে এগিয়ে নেওয়া হলে’ তা ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নাকবা’ (বিপর্যয়) বা ফিলিস্তিনের জাতিগত নির্মূলের দৃশ্যের কথাই মনে করিয়ে দেবে।

১৯৪৮ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পরপরই প্রায় আট লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয় ও তাদের রাষ্ট্রহীন হওয়ার বিপর্যয় শুরু হয়। আরবিতে এই বিপর্যয়কে বলা হয় ‘নাকবা’।

‘নাকবা’কে ফিলিস্তিনের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক দিন বলে বিবেচনা করা হয়। মূলত নাকবার কারণে বাস্তুচ্যুত বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি সেসময় প্রতিবেশী আরব দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং আরব নেতারা এখন বলছেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যে কোনও পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য হবে না।

রোববার এক বক্তৃতায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করার যেকোনও সম্ভাব্য পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজা উপত্যকা বা পশ্চিম তীর থেকে কাউকেই বাস্তুচ্যুত হতে দেব না।’

সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ০১ জানুয়ারি ২০২৪


আরো খবর: