শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন
নোটিশ::
কক্সবাজার পোস্ট ডটকমে আপনাকে স্বাগতম..  

অ্যাপলের হ্যাক-বার্তা ঘিরে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি, মহুয়ার পাশে রাহুল, চাপের মুখেই কি তদন্তের নির্দেশ?

প্রতিবেদকের নাম:
আপডেট: বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩
অ্যাপলের হ্যাক-বার্তা ঘিরে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি, মহুয়ার পাশে রাহুল, চাপের মুখেই কি তদন্তের নির্দেশ?


নয়াদিল্লি, ০১ নভেম্বর – অভিযোগটি প্রথম মঙ্গলবার সকালে তুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। আমেরিকার সংস্থা অ্যাপলের মেসেজ এবং ইমেল নোটিফিকেশনের স্ক্রিনশট এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দাবি করেছিলেন, তাঁর আইফোন নরেন্দ্র মোদী সরকার হ্যাক করতে চাইছে বলে সতর্কবার্তা এসেছে। মহুয়ার সেই অভিযোগ ঘিরে দিনভর সরগরম রইল জাতীয় রাজনীতি। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর, শিবসেনার প্রিয়ঙ্কা অ্যাপল সংস্থা থেকে পাওয়া ‘সতর্কবার্তার’ কথা জানালেন। অভিযোগ এল আপ সাংসদ রাঘব চড্ডার তরফেও। এমনকী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যে সাংসদেরা সরব, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রক তাঁদের ফোন হ্যাক করছে।

বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র আরও অনেক নেতা অ্যাপল থেকে সতর্কবার্তা পেয়েছেন বলে দাবি মহুয়ার। শশী, প্রিয়ঙ্কা, রাঘবের পাশাপাশি সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, সিবিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং কংগ্রেস নেতা পবন খেরাও অ্যাপলের সতর্কবার্তা পেয়েছেন। এক্স হ্যান্ডলে সেই সতর্কবার্তা পোস্ট করে তিনি লেখেন, তিনি লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার আমার ফোন এবং ইমেল হ্যাক করার চেষ্টা করছে। অ্যাপল থেকে সেই সতর্কবার্তা পেয়েছি।’’ পোস্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, আদানি এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে উল্লেখ করে মহুয়া আরও লিখেছেন, ‘‘আপনাদের ভয় দেখে আমার আপনাদের প্রতি করুণা হচ্ছে।’’

মহুয়ার পরে অনুরূপ একটি পোস্ট করেছেন কংগ্রেস সাংসদ তারুরও। তিনি জানিয়েছেন, তিনিও অ্যাপল থেকে এমন সতর্কবার্তা পেয়েছেন। যে অ্যাপল আইডি থেকে তাঁকে ইমেল পাঠানো হয়েছে, তার সত্যতা যাচাই করেছেন তারুর। স্ক্রিনশট পোস্ট করে কেন্দ্রের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সরকারের বেকার কর্মচারীদের আমার মতো করদাতার জন্য ব্যস্ত রাখতে পেরে ভাল লাগছে।’’ এর পর প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে উল্লেখ করে তারুর লিখেছেন, ‘‘এর চেয়ে জরুরি কাজ আর পেলেন না?’’

অ্যাপলের সতর্কবার্তা নিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুলও। কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন ফোন হ্যাকিংয়ের চেষ্টা বা ওই সমস্ত সতর্কবার্তা আসলে বিরোধীদের বেপথু করার চেষ্টা। মোদী চান না, বিরোধীরা যে পথে এগোচ্ছেন সেই পথে আরও এগিয়ে যান এবং লক্ষ্যে পৌঁছন। আইফোন হ্যাকিং নিয়ে মোদীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘দেশকে ভুয়ো স্বপ্ন দেখিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই সমস্যার কথা খুব কম লোকই বলেন। আমরা বলছি। তাই এই সব হ্যাকিং, ইডি-সিবিআই, সতর্কবার্তা আসছে। কিন্তু আমরা ভয় পাওয়ার মানুষ নই, লড়াই করব।’’

বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘‘বিরোধীরা সমালোচনার অজুহাত খুঁজতে থাকেন। কেন্দ্রকে আক্রমণ করার কোনও বড় কারণ না পেয়ে এখন হ্যাকিং নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন তাঁরা।’’ তবে একই সঙ্গে মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘অ্যাপলের ওই সতর্কবার্তা শুধু ভারতে নয়, আরও অন্তত ১৫০টি দেশে গিয়েছে। কেন ওই সতর্কবার্তা এল, তা জানতে বিশদ তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’’ অন্য দিকে অ্যাপলের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, এই বিষয়ে আর বেশি কিছু তথ্য দিলে তা ভবিষ্যতে সুবিধা করে দেবে ‘রাষ্ট্র পরিচালিত হামলাকারী’দেরই।

কী রয়েছে অ্যাপল-বার্তায়?

অ্যাপল থেকে মহুয়ার আইফোনে আসা সতর্কবার্তায় লেখা রয়েছে, ‘‘রাষ্ট্রপরিচালিত হ্যাকারেরা আপনাকে ‘টার্গেট’ করেছে। অ্যাপল আইডির সঙ্গে আপনার যে আইফোনটি যুক্ত করা আছে, সেটি হ্যাক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনি কে, কী করেন— সম্ভবত এ সব দেখে হ্যাকারেরা নির্দিষ্ট করে আপনাকেই ‘টার্গেট’ করেছে।’’

অ্যাপল থেকে আরও বলা হয়েছে, ‘‘এই রাষ্ট্র পরিচালিত হ্যাকারেরা যদি আপনার আইফোনে এক বার ঢুকতে পারে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, কথোপকথন এমনকি ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনও ওদের হাতে চলে যাবে। তাই দয়া করে এই সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করবেন না।’’

রাহুলের নিশানায় আদানি

অ্যাপলের হ্যাক-বার্তা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল মঙ্গলবার নিশানা করেন আদানিকে। তিনি দাবি করেন, বিরোধীদের নজর ঘোরাতেই এসেছে ওই সতর্কবার্তা। তাতে কী লেখা ছিল, তা-ও স্পষ্ট করে জানান রাহুল। সাংবাদিক বৈঠকে পড়ে শোনান অ্যাপলের সতর্কবার্তার বয়ান, তাতে লেখা হয়েছে— ‘‘অ্যাপল মনে করে, আপনারা রাষ্ট্রের প্ররোচিত হ্যাকারদের দ্বারা আক্রান্ত। যারা আপনার অ্যাপল আইডি দিয়ে নথিভুক্ত আইফোনের সুরক্ষা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।’’ ওই বয়ান পড়ার পর রাহুল বললেন, ‘‘এটা তোতার কাজ’’।

এর পরেই সেই ‘তোতার’ পরিচয় স্পষ্ট করে রাহুলের মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রাণ রয়েছে আদানি নামের তোতার মধ্যে। আদানির হাতে দেশের সমস্ত জাহাজ বন্দর তুলে দিয়েছেন, সমস্ত বিমানবন্দর তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দেশের খাবারের মূল উৎস যে কৃষিক্ষেত্র, তার আইনও বানিয়ে দেওয়া হয়েছে আদানির সুবিধা করে দিতে। পরিকাঠামো জনিত ব্যবসা তাঁর হাতে। আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন সেই রাস্তা তৈরির সিমেন্টও আদানির হাতে। পুরো দেশটাই আদানির মতো তিন চার জনের হাতে তুলে দিচ্ছেন মোদী।’’ রাহুলের দাবি, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র যাঁরা অ্যাপলের তরফে ওই বার্তা পেয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে আদানি সংক্রান্ত আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত। তালিকায় মহুয়া মৈত্রের বলা নামের পাশাপাশি সুপ্রিয়া সুলে, টিএস সিংহ, কে সি বেণুগোপালের নামও বলেন তিনি। জানান, তাঁর দফতরের অনেকেও অ্যাপলের সতর্কবার্তা পেয়েছেন।

তদন্তের নির্দেশ মোদীর মন্ত্রীর

মধ্যপ্রদেশের একটি কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী। বিরোধীদের কাছে আসা আইফোন হ্যাকিংয়ের সতর্কবার্তা নিয়ে সেখানেই প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। জবাবে মন্ত্রী জানান, অ্যাপলের ওই বার্তার বক্তব্যের কোনও ব্যাখ্যা কেন্দ্রের কাছে নেই। ওই সতর্কবার্তার জন্য কেন্দ্রকে দোষারোপ করতে শুরু করেছে বিরোধীরা। যদিও ওই বার্তা আরও অন্তত দেড়শোটি দেশে গিয়েছে। সব সময় এমন সতর্কবার্তা সত্যি হয় তা-ও নয়। এই বার্তাও সেইরকম ‘ফল্স অ্যালার্ম’ হতে পারে বলে জানান অশ্বিনী।

তবে একই সঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই বার্তা কেন এল, তা জানতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। যাঁরা ওই সতর্ক বার্তা পেয়েছেন, তাঁরা যেন তদন্তে সহযোগিতা করেন।’’ সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘অ্যালগরিদ‌্মের ত্রুটি’-র কারণেই এমন বার্তা পেয়েছেন অনেক নেতা। একে শিবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা একে ‘হাস্যকর অজুহাত’ বলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, কেন বেছে বেছে শুধু বিরোধীরাই পেলেন এই বার্তা।

অ্যাপলের সাফাই

বিরোধী নেতাদের কাছে পাঠানো আইফোন হ্যাক সংক্রান্ত সতর্কবার্তা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার ‘সাফাই’ দিয়েছে অ্যাপল। টেকনিক্যাল সাপোর্ট পেজে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালিত হামলাকারীরা সাধারণত আর্থিক ভাবে পুষ্ট এবং অত্যাধুনিক হয়। গোয়েন্দাদের হুঁশিয়ারির উপর নির্ভর করে এ ধরনের হামলা ধরতে গেলে দেখা যায়, তা অনেক সময়ই ত্রুটিযুক্ত এবং অসম্পূর্ণ। সংস্থার তরফে আরও জানানো হল, কিছু নোটিফিকেশন অনেক সময়ই মিথ্যে সঙ্কেত হতে পারে। আবার অনেক হামলা ধরাই পড়ে না। এর পরেই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই বিষয়ে আর বিশদে তথ্য তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই নিয়ে আর তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এর ফলে রাষ্ট্র পরিচালিত হামলাকারীরা ভবিষ্যতে ধরা পড়া থেকে বাঁচার পথ পেয়ে যাবে।’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন
আইএ/ ০১ নভেম্বর ২০২৩





আরো খবর: