কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেনঃ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। ক্ষুধা যে কতো মারাত্মক, কতো ভয়ানক, কতোটা ভয়াবহ, তা উপলব্ধি না করলে কবি হয়ত কবিতার পংক্তি গুলো লিখতে পারতেন না।
কবি রফিক আজাদ এর কবিতায় ফুটে উঠেছে ” ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র খাবো।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, এই সংকটময় মুহূর্তে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত,তারাই সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত যারা ছিন্নমূল, ভবঘুরে, পাগল, মানসিক রোগি। বিশাল আকাশের নিচে যাদের বসবাস। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা মানুষের এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদার একটিও তাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারাই আজ মহা সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। চাল নেই চুলো নেই। নেই হাঁড়ি, পাতিল, ডেকসি। নেই মাথা গুজার ঠাঁই।
কবির ভাষায়:
ভীষণ ঠেকা ঠেকসিরে ভাই
ভীষণ ঠেকা ঠেকসি
চাল আছে তো নেই যে ঘরে
হাণ্ডি পাতিল ডেকসি।
সেইসব মানুষ গুলো নিয়ে একটু ভাবার, কিংবা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার মতো সহৃদয়বান ব্যক্তির অভাব থাকলেও কেউ কেউ যে এগিয়ে আসছে না তা নয়।
মানসিক রোগিদের তহবিল (মারোত) টেকনাফ, তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা, সর্বাধিক আগ্রহ দিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ রান্না করা খাবার বিতরণের যে প্রয়াস হাতে নিয়েছে তাতে করে অভুক্ত মানসিক রোগিদের ক্ষুধা কিছু টা হলেও ম্লান হচ্ছে। ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার তখনই বুঝা যয় যখন খাবার নিয়ে তাদের সামনে যাই। তীর্থের কাকের মতো ওরা চেয়ে থাকে কখন মারোতের কর্মিরা আসবে। খাবার দেবে।
গত ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া লক ডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে মারোত মানসিক রোগিদের কল্যণে যে যুগান্তরকারী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ১৫ জুন পর্যন্ত তারা থামেনি।
আজ ৯৬ তম দিবস। প্রকৃতির প্রতিকুলতাকে উপেক্ষা করে মারোতের নিবেদিত প্রাণ কর্মিরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যথাসময়ে মানসিক রোগিদের মধ্যে খাবার পৌঁছে দেয়ার জন্য। বিলম্ব হলে ক্ষুধার্ত পাগলদের কষ্ট হবে ভেবে তাঁরা তাঁদের নিজের সময় নষ্ট করে এই বৃষ্টির মধ্যেও খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কর্মই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। ভালো কাজের সুফল একদিন আসবে স্রষ্টার পক্ষ থেকে। সুফল আসুক বা না আসুক অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে পারার যে আনন্দ,যে আত্মতৃপ্তি সেটা অন্যরকম অনুভূতি।
তাই সেই উপলব্ধি, সেই অনুভূতি থেকেই কার্যক্রম চলমান। মারোতের কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়ে, অনুপ্রাণিত হয়ে ইতিমধ্যে দেশও বিদেশের বিভিন্ন ব্যাক্তি, সংগঠন, শুভাকাঙ্ক্ষী, হিতৈষী, সমাজসেবী, মানবতাবাদী, সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনাকালীন জাতির ক্রান্তিলগ্নে মানসিক রোগিদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য এসব মানুষের অকৃত্রিম, অকৃপণ ভালোবাসা তাদেরকে মহৎ আসনে অধিষ্ঠিত করবে।
মারোতের গহিত পদক্ষেপ ও কর্মসূচীর আলোকে শিল্পী ভুপেন হাজারিকার গান- “মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য। একটু সহানুভূতি মানুষ কি পেতে পারেনা…… ”
সেই সুর ও ছন্দে মারোতের অগ্রগতি ও অগ্রযাত্রায় যারা ইতোমধ্যে এগিয়ে এসেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ। আর যারা এগিয়ে আসতে আগ্রহী তাদেরকে স্বাগতম। আপনার সহযোগীতা মারোতের কার্যক্রমকে দীর্ঘ স্থায়ী করবে।
আসুন হাত বাড়াই,ক্ষুধা তাড়াই।